নিজস্ব সংবাদদাতা: ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভারী বৃষ্টিপাতের মতই এবার করোনা সংক্রমনের পূর্বাভাসও মিলবে! আর যেটা মিললে যে এলাকায় এই সংক্রমনের ইঙ্গিত পাওয়া যাবে সেই এলাকা ঘিরে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে সংক্রমনকে রুখে দেওয়ার জন্য কিংবা মোকাবিলার জন্য।করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই পূর্বাভাস পদ্ধতি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার কারন গোষ্ঠী সংক্রমনের মুখে দাঁড়িয়ে কোনও এলাকা সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস পাওয়াটা লক্ষ কোটি টাকার চেয়েও দামি। কিন্ত এটা কি সম্ভব? আবহাওয়া বিদ্যায় যা করা যায় তা কি মহামারীর ক্ষেত্রে সম্ভব?আইআইটি খড়গপুরের একদল গবেষক বলছেন, হ্যাঁ সম্ভব, এরজন্য দরকার নিখুঁত পরিসংখ্যান বিদ্যা ও তার প্রয়োগ।
আইআইটি খড়গপুরের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ দাস এমন একটি লজিস্টিক মডেলটি তৈরি করেছেন যা, দৈনিক সংক্রমণ পরিসংখ্যান পেতে কাজে দেবে। এই মডেলের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে করোনা সম্পর্কিত যাবতীয় জাতীয় তথ্যে এবং তার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্র, তামি নাড়ু, দিল্লি, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্য প্রদেশের মতো আটটি রাজ্য থেকে সংগৃহীত তথ্যরাজি।
মডেলেটির জনক অধ্যাপক দাস জানিয়েছেন, ডোমেইন থেকে পাওয়া দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যার উপর ভিত্তি করেই পূর্বাভাস করা হয়। এই তথ্যগুলি বিশ্লেষন করবে আগে থেকেই তৈরি করা একটি বিশেষ সফটওয়্যার যা কিনা বলে দেবে কোন এলাকায় ভবিষ্যতে করোনার বিস্তার কিরকম ভাবে বাড়তে পারে এবং তার ঘনত্বের পরিমান। এই ভবিষ্যদ্বাণী স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিল্প, অর্থনীতি এবং শিক্ষাবিদদের সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করবে। তথ্য বিশ্লেষনে এই অনুমান রেখা (prediction curve)অতীতের ডেটার সঙ্গে বর্তমানে প্রাপ্ত হিসাবের তুলনা করবে “এবং ভবিষ্যতে করোনা-দমন পরিকল্পনা তৈরির জন্য সাহায্য করবে।
আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারি বলেছেন, ‘এতদিন অবধি মানুষ কী ভাবে জীবনযাপন করবে এবং কী ভাবে তাদের কার্যক্রম পরিকল্পনা করবে সে সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব কোনও নিশ্চিত পরিকল্পনা ছিলনা, অনেকটাই সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটা অনিশ্চিত ভাবনায় কাজ করে মানুষ। এই ভাবনাটা যেন একটি কালো বাক্স। এখানে এবার একটি নিখুঁত পরিসংখ্যান মডেলের ওপর দাঁড়িয়ে এ জাতীয় গবেষণা করা হবে, যার ফলে মানুষ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে ও বুঝতে সক্ষম হবে।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের চেনা জায়গা যেখানে সে নিরাপদ বিচরন করত সেটা পুরোপুরি বদলে গেছে। লকডাউনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতীয় জনগণের বিভিন্ন গতিশীলতার ধরণ, শ্রমিকদের বৃহৎ পরিমাণে স্থানান্তর, ডায়াগনস্টিক সুবিধার পরিবর্তন, করোনভাইরাসের বিবর্তন ইত্যাদি একটা অন্য পৃথিবী এনেছে মানুষের সামনে কিন্তু মানুষের কাছে কোনও তথ্য নেই যে কোথায় যাওয়া উচিৎ আর কোথায় নয় তা জানতে পারে। এই লজিস্টিক মডেল সেই তথ্য দেবে। এলাকায় প্রাপ্ত কোভিড সংক্রমনের সাম্প্রতিক গতি, সেখানে বা তার আশেপাশের এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিক বা অন্য কোনও কারনে নতুন জনবিন্যাস হয়েছে কি না? ইত্যাদি বহুমুখী পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা যাবে জায়গাটি নিরাপদ কিনা।
অধ্যাপক গবেষক দাস জানিয়েছেন , ‘ এখনও অবধি যে সমীক্ষা করা হয়েছে তার ভিত্তিতে এই ইঙ্গিত মিলছে যে ভারত এখনও এই কোভিড সংক্রমেনর কোনও নির্দিষ্ট চরিত্র অর্জন করেনি। অর্থাৎ কোনও একটি উপায়ে এর মোকাবিলা করা যাবেনা, দরকার বহুমুখী পরিকল্পনার।”
গবেষক অধ্যাপকের মতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের আগে কোভিড ১৯ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাঁর আরও বক্তব্য, এই জীবাণু আমাদের নিশ্চিন্তে থাকতে দেবে না। তবে বাস্তবকে মেনে নিতে হবে এবং মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’