নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার রাত ১০টার পর আসা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট পেয়ে ঘুম ছুটে গেছে খড়গপুর মহকুমার পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের। রিপোর্ট বলছে ফের বড়বড় করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলতে চলতে শহরে। তবে সংখ্যাটা একই সাথে এক ডজন নাকি দু’ডজন নাকি তারও বেশি এটাই এখন ভাবাচ্ছে। খড়গপুর মহকুমার এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন,”একই সাথে ৬জন আরপিএফ কর্মী বা রেল সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানের করোনা পজিটিভ আসায় চমকে উঠেছিল শহর। কিন্তু এবার যা আসছে তাতে সেই রেকর্ড ভেঙে যাবে। সংখ্যাটা তারও দ্বিগুন নাকি দ্বিগুনেরও দ্বিগুন হবে সেটাই এখন ভাবনার, আর কয়েকঘন্টার মধ্যেই চিত্রটা পরিস্কার হয়ে যাবে।”
প্রশ্ন হল কী এমন রিপোর্ট এল যাতে চোখ কপালে উঠেছে খড়গপুর প্রশাসনের? এক কথায় রিপোর্ট এসেছে ১৫টি ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত। না, আরও একটু খুলে বলা যাক। করোনা পরীক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এখানে যেমন উপসর্গ নিয়ে আসা, কিংবা বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্ৰহ করে পরীক্ষা করা হয় ঠিক তেমনি একটি এলাকায় সংক্রমন কতটা ছড়িয়েছে বা গোষ্টি সংক্রমন ছড়িয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য ওই এলাকায় নির্বিচার(Rapid)নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়। রবিবার খড়গপুর মহকুমা শাসক বৈভব চৌধুরীর উদ্যোগে একটি বিশেষ অভিযান চালানো হয় শহরের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচবেড়িয়া এলাকায় এবং ৫৫ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে খড়গপুর শহরে করোনা আক্রান্ত হয়ে যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তার ২ জনই এই এলাকার। আবার এই দুজনের পরিবার থেকেই ফের আক্রান্ত ধরা পড়ে। এই অবস্থায় শহরে সংক্রমনের গতি প্রকৃতি জানতেই ওই এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে রবিবার ৫৫জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয় বাড়িতে বাড়িতে গিয়েই। সেই নমুনা পাঠানো হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরাল ল্যাবরেটরিতে। রবিবার ছুটি থাকায় পরীক্ষা হয়নি। সোমবার সেই পরীক্ষার কাজ শুরু করা হয়, যেখানে থেকে জানা গেছে ১৫টি ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত ফল এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে এই অমীমাংসিত ফল নিয়ে দুশ্চিন্তার কারন কী? স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন দুশ্চিন্তার কারন রয়েছে যথেষ্টই। তবে সেটা বুঝতে গেলে কোন প্রক্রিয়ায় এই অমীমাংসিত ফল আসে সেটা বুঝতে হবে।
কোনও একটি এলাকায় বা একাধিক এলাকায় সংক্রমনের গতিপ্রকৃতি পদ্ধতি বোঝার জন্য সেই এলাকাগুলি থেকে যে সব নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেই সংগৃহীত নমুনাগুলিকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয় হয়। অর্থাৎ ধরা যাক চার নম্বর ওয়ার্ড, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এবং আরও কিছু এলাকা যা কিনা খড়গপুরের বাইরেও হতে পারে। সব নমুনা ফয়েলগুলি মিলিয়ে দেওয়া হল। এরপর প্রতি চারজনের একটি ইউনিট করে প্রতি ইউনিট থেকে একজনের নমুনা পরীক্ষা করা হল। সেই রেজাল্ট যদি পজিটিভ আসে তাহলে গোটা ইউনিটকেই বলা হচ্ছে অমীমাংসিত এর অর্থ এই ইউনিটের একজন অবশ্যই পজিটিভ রয়েছে কিন্ত তাঁদের সবার পরীক্ষা হয়নি বলে কার কার পজিটিভ অথবা নেগেটিভ জানা যায়নি। এরজন্য ওই গ্রুপের বাকিদেরও নমুনাগুলিও পরীক্ষা করে এবার চিহ্নিত করার কাজ শুরু হবে।
তাহলে ১৫টি অমীমাংসিত ফল আসার অর্থ হল অন্ততঃ ১৫জন পজিটিভ। পরের পরীক্ষায় সংখ্যাটা বাড়তেও পারে। এখন যেহেতু এটি পুল টেস্ট পদ্ধতি যেখানে অনেকগুলি এলাকার নমুনা মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই এই ১৫টির সব কটি খড়গপুরের এমনটি না ও হতে পারে কিন্তু এর মধ্যে খড়গপুর তো আছেই। আর সেই কারণেই দুশ্চিন্তা যে সেই সংখ্যাটা কত? কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবশ্য সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে।