Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✒️কলমে: আশিস মিশ্র

পর্ব –৪

রবিবারের সান্ধ্য আড্ডাটি বদলে গেলো সোমবারে। আড্ডায় মুড়ি না হলে ঠিক জমে না। এই সংকট কালে প্রতিটি মুখ যেন দারু ভাস্কর্যের মতো হয়ে গেছে। তাদেরই একজন সিং ভাইটির প্রসঙ্গ তুলতেই একজন বললো, কারুর মৃত্যুতে TRP বাড়ে। কারুর মৃত্যুতে RIP বাড়ে। আমদানি কৃত সেন্টিমেন্ট তারপর ঝিমিয়ে যায়।

যেমন ঝিমিয়ে পড়েছেন মন্ডল দি। পুনর্মূষিকভব। কেউ নাকি খোঁজও নেয় না। না নেওয়াই স্বভাবিক। সংগীত চর্চা যে দীর্ঘ সাধনার ফসল। হিম শীতল হয়ে যাওয়া দইও ঠিকঠাক পরিচর্যা না পেলে পচে যায়। তেমনি সহজাত প্রতিভার পচন অনিবার্য। ভাগ্যিস সেই শুভানুধ্যায়ীরা ও সোশ্যাল মিডিয়া জগৎ ছিলো, না হলে কী আর হতো। যেমন চলছিল,তেমনি চলবে। যতটা এগিয়েছিলেন,কৃতজ্ঞ থাকুন তাঁদের কাছে। বেশি বাড়াবাড়ি করে বলতে গেলেই কেউ আর খোঁজও নেবে না।

যেমন বেশি বেড়ে গেছিলেন সেই সব প্রথিতযশা ভদ্রলোকজন। তাঁদের কেউ অকালে মৃত,কেউ জেল খাটছেন, কেউ রাজনৈতিক জীবনে ফকির। লোভ কোথায় তাঁদের নামিয়ে দিয়েছে। কর্মফল ভোগ করতেই হবে যে দাদা।

এ নিয়ে মাঝে মাঝে নন্দদা এসে খুব মজার সব গল্প বলেন। বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর নেশা গল্প, কবিতা লেখা, বইয়ের সংগ্রহশালা গড়া,ছবি আঁকা ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা। এ পর্যন্ত বহু জনকে বিনা পয়সায় ওষুধ দিয়ে ভালো করেছেন। তিনি বললেন, দেখো ভাই অন্যায় যে করবে তার কোনো ক্ষমা নেই। কদিন আগে বা পরে। এই ৭০ বছর জীবনে তার অনেক প্রমাণ পেলাম। সে যাই হোক তোমার কেমন লেখালেখি হচ্ছে বলো ভাই। আমি বললাম, এই তো, কী আর হবে সব পচে গেলো দাদা। তিনি হাসলেন। বললেন, একদিন এসো বাড়িতে। অতো ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা ভাই, তোমার রবিবার হলুদ হয়ে গেলো কীভাবে। আমি বললাম, পড়েছেন? তিনি বললেন, সব পড়েছি। একটি হলুদ রবিবারে।
আমি বললাম, তা আমি নিজেই জানি না, কেন সে হলুদ হয়ে গেছে। তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। তিনি বললেন, তা ঠিক। সব কিছুর অতো ব্যাখ্যা হয় না। যেমন ধরো ” পুলকিত যামিনী ” ” নগ্ন নির্জন হাত” এর কী ব্যাখ্যা দেবো? আমি বললাম, তাই তো।

আড্ডায় যখন বসতেন ধ্রুবদা বা বীরেনদা,তাঁরাও বলতেন, সব কিছুর ব্যাখ্যা করা কঠিন…

এই সংকট কালে কতো দিন তাদের দেখিনি। কতোদিন ধাড়াবাবুর চায়ের দোকানে বসা হয়নি। শুধু টেলিফোনে বীরেনদা খোঁজ নিয়ে বললো, আমার এই অবসর জীবনে এতকিছু দেখে যাবো ভাবতেই পারিনি। মরে পড়ে থাকলে কেউ তা ছুঁয়েও দেখবে না। দূরত্বের কী মহিমা, ভাইরাস জনিত দূরত্ব। সব মায়া পচা পাঁকের মধ্যে মাথা নত করে বসে আছে।

আর মায়া বাড়িয়ে লাভ কী, যে চলে গেছে, একেবারেই গেছে। এ কথা বললো,অশোক দা। আমি বললাম, পাড়ার ভুলোটা মারা গেছে গো। সবাই তার জন্য মন খারাপ করছে। বাড়ি ভেঙে গেছে। কিন্তু সেই আম গাছটি ভাঙেনি আমপানে। সে জানতো রোজ তাকে ওই গাছের নীচে খাওয়ার দেওয়া হতো। শেষ বারের মতো খেয়ে চলে গেছে! আসলে তার ভেতরের অসুখ আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি।

সব তো বোঝা যায় না রে। উপলব্ধি করতে হয়। একদিন রবিবারের আড্ডায় ধ্রুবদা বলেছিলেন। ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর নেশা গান আর নাটক। বাড়িতেই বিশাল সংগ্রহশালা পুরনো রেকর্ডের। তিনি
‘ লতাকন্ঠী’ ‘ আশাকন্ঠী’ শুনলে খুব রেগে যেতেন। বলতেন, যেন গলা টিপে দিই অমন শুনলে। গান কি ফাজলামোর জিনিস? চল, মামার চায়ের দোকানে। মরিয়া সব ভূত হইয়া যাবে। পরতিভা,পরতিভা…অলাউঠামনকার টিআরপি বাড়ে…
( চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular