✒️কলমে: অভিজিৎ রায়
বিষন্নতার হাজারখানেক শব্দ মস্তিষ্কের অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ল খাতার পাতায়। তারপর কারা সেই শব্দগুলো পড়লেন আর পড়ার পর ভাবতে শুরু করলেন সেইসব বিষন্নতা ও অন্ধকার প্রসঙ্গে তা জানার খুব প্রয়োজন হয়ে পড়লেও জানতে পারা যায় না। কোনওদিন পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে সেই পাঠকের সঙ্গে কবির দেখা হয়ে যায় আকস্মিকভাবেই। আবার অন্যভাবে দেখলে এটাই বলা যায় যে, শব্দের বিষন্নতার গোপন সুর পাঠকের হৃদয়ে বাজতেই থাকে। সেই অনুরণনের রেশ ধরে পাঠক ধীরপায়ে এগিয়ে আসেন কবিতার দিকে। পাহাড়ি রাস্তার দু’ধারে তখন লাল লাল থোকা থোকা রডোডেনড্রন ফুল। কবি ও পাঠক দুজনেই তখন ভেবে পান না কবিতায় মোহিত হয়ে পড়বেন নাকি রডোড্রেনড্রনে। ঢালু পথ বেয়ে নেমে আসা দুজোড়া পায়ে তখন এক নতুন সুর তৈরি হয়। যে সুর কবিকে পরবর্তীকালে কবিতা লেখার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে। অবসাদের গুটিপোকা থেকে বেরিয়ে আসে রঙিন প্রজাপতি। আমাদের আশেপাশে তখন সেই প্রজাপতি সারাক্ষণ ডানা ঝাপটায়। জগত সংসার যেন সেই ডানা ঝাপটানোর সুরে আবহমান কবিতার চিরকালীন বিষাদ ও আনন্দকে একই শব্দে বন্দি করে।
প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি বিষাদের ডানায় এরকমই আলোর অঙ্গীকার লেখা থাকে। আমরা হয়তো সকলে সেই ভাষা পড়ে উঠতে পারি না। বুঝে উঠতে পারিনা বহুমাত্রিকতার ইন্দ্রজাল। ছায়ান্ধকারের রোমাঞ্চকে আমরা অনেকেই উপভোগ করে উঠতে পারি না। বরং আমরা আতঙ্কিত হই। শব্দের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নিরবতা এবং নিরবতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা শব্দকে আমরা ভুল বুঝি। কবিতার ছায়ান্ধকারকে দূরে সরিয়ে রেখে আমরা আসলে জীবনের রোমাঞ্চকেই আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। অন্ধকারের মধ্যেই যে থাকে আলোর ঠিকানা এবং নানাভাবে অন্ধকারকে সঙ্গী করে সেই আলোর সদর দরজায় পৌঁছানো সম্ভব তা একমাত্র প্রকৃত কবিতার পাঠের মাধ্যমেই আমরা শিখতে পারি। কবিতার বহুমাত্রিকতা আমাদের জীবনের সম্পর্কগুলোর নানা চাওয়া পাওয়া, নানা টানাপোড়েনের সাথে পরিচয় করাতে করাতে অবসাদের থেকে মুক্তি দেয়। যে কবিতা কবির বিষন্নতা থেকে জন্ম নিয়ে এগিয়ে যায় পাঠকের দিকে, সেই কবিতায় পাঠকের অবসাদকে ম্লান করে, কখনও মুক্তি দেয় অবসাদ থেকে। এই ভ্রমণকাহিনী কি অন্ধকারে আলোর নয়?
সমাপ্ত