নিজস্ব সংবাদদাতা: অর্নব গোস্বামীর রিপাবলিক টিভি থেকে জি নিউজের সুধীর চৌধুরী, ভারতের মিডিয়া জগতে যাঁরা গদি মিডিয়া বা শাসক অনুগত সংবাদমাধ্যম বলেই পরিচিত যাঁরা ক্রমাগত বলে যাচ্ছিলেন চিন নাকি ভারতের ভেতরে ঢুকে অনেকখানি জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিজেপির মিডিয়া সেলের রাজনৈতিক প্রচারকের মতই যাঁরা ম্যাপ এঁকে কিংবা কল্পিত স্যাটেলাইট জাল চিত্র বানিয়ে মানুষকে বোঝাতে শুরু করেছিলেন যে ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করে চিন নাকি নির্মান কার্য শুরু করে দিয়েছিল তাঁদের গালে সপাটে চড় কষাল ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষ পরবর্তী কালীন সর্বদলীয় বৈঠক। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষনা করলেন যে, চিন ভারতের কোনও অংশ দখল করাতো দুরের কথা, ভারতের মাটিতে পা ই রাখেনি।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ় উক্তি রীতিমতো বিপাকে ফেলে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রককেও কারন ভারত চিন সীমান্তের লাদাখ সংলগ্ন গালওয়ানে চিনের সেনারা ভারতীয় সেনাদের নিষেধ অগ্রাহ্য করেই ভারতের মাটিতে পা দিতেই সংঘর্ষ শুরু হয় বলে দাবি করেছিলেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব অথচ শুক্রবারের বৈঠকে মোদি জানিয়ে দেন ভারতের ভূখন্ডে প্রবেশ করেইনি চিনের সেনারা। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একা নন, বরং তাঁর পৌরহিত্যে হওয়া শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
বৈঠকে বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এআইএডিএমকে, ডিএমকে, টিআরএস, জেডি(ইউ), বিজেপি, এলজেপি, বসপা, সপা, শিবসেনা, এনসিপি-সহ ২০ টি রাজনৈতিক দলের সভাপতিরা ছিলেন। তৃণমূলের তরফে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মতো সর্বদলীয় বৈঠক শুরুতে গালওয়ান সংঘর্ষে শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
এই বৈঠক আগে কেন ডাকা হয়নি, সেই প্রশ্ন করেন সনিয়া গান্ধী। তিনি বলেন, একমাস ধরে সরকার কী করছিল। এখন পরিস্থিতি কী, সেটাও জিজ্ঞেস করেন। এটা গোয়েন্দা ব্যর্থতা কিনা, সেটাও প্রশ্ন করেন তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোদী বলেন, ‘ওরা (চিন) আমাদের ভূখণ্ডে না তো প্রবেশ করেছে, না আমাদের কোনও পোস্ট দখল করেছে। লাদাখে আমাদের ২০ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। কিন্তু যাঁরা ভারতমাতার দিকে চোখ তুলে দেখেছেন, তাঁদের সবক শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, মোতায়েন হোক, অ্যাকশন হোক বা কাউন্টার অ্যাকশন হোক, জল-স্থল-বায়ুতে আমাদের সেনার যা করার দরকার তাই করছে। বর্তমানে আমাদের সেই ক্ষমতা আছে যে কেউই আমাদেরএক ইঞ্চি ভূখণ্ডের দিকেও তাকিয়ে দেখতে পারবে না।
মোদি আরও বলেন, “নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য গত কয়েক বছরে সেইসব এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিমান, আধুনিক হেলিকপ্টার, মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম-সহ আমাদের সেনার অন্যতম প্রয়োজনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নয়া পরিকাঠামোর ফলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আমাদের টহলদারির ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে সতর্কতাও বেড়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় কী কী গতিবিধি হচ্ছে, তা সময়ে নজরে চলে আসে। আগে যে এলাকাগুলিতে বেশি নজর রাখা হত না, এখন সেখানে ভালোভাবে নজরদারি চালাচ্ছেন জওয়ানরা। এখনও পর্যন্ত যাদের কেউ আটকাত না, জিজ্ঞাসা করত না, এখন আমাদের জওয়ানরা তাঁদের আটকাচ্ছেন। ”
গত মাসের গোড়ার দিক থেকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চিনের সঙ্গে ভারতের বিবাদ শুরু হয়। তারপর সীমান্ত পরিস্থিতি, ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনা ঢুকে এসেছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্নে কেন্দ্রের নীরবতা নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস। অন্যান্য বিরোধী নেতারা আক্রমণ করলেও মূলত সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধীর থেকে বেশি প্রশ্ন আসছিল। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার গালওয়ান সংঘর্ষের পর আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ে। লাগাতার প্রশ্নে জেরবার হয়ে গত বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন মোদি। যেখানে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে চিন ভারতের ভূখন্ডে প্রবেশই করেনি, কোনও জায়গা দখল করা তো দুরের কথা।
এখন লাখ টাকার প্রশ্ন এটাই যে, তাহলে সংঘর্ষ হল কেন? কোন পরিস্থিতিতে ভারতের ২০জন সৈনিক মারা গেলেন আর ভারতের এক সেনা আধিকারিক সহ ১০জনকে চিন নিজেদের হেফাজতে নিল কী ভাবে? তাহলে কী ভারতের সেনারাই ঢুকে গিয়েছিল চিনের ভূখন্ডে? না, এর জবাব অবশ্য এই বৈঠকে মোদি দেননি। প্রশ্ন এও উঠছে যে যদি সরকার ভারতের সেনাদের এতটাই শক্তিশালী করেছে যে আমাদের দেশের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতেই পারবেনা তাহলে চিনারা আমাদের সেনাদের তুলে নিয়ে গেল কী করে? প্রশ্ন আরও, যদি সীমান্তে হেলিকপ্টার সহ এই সরকার এত অত্যাধুনিক সুবিধা বহাল রেখেছে তবে আহত সেনারা ২৪ঘন্টা হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় পড়ে থেকে মারা গেল কেন? কেন তাঁদের উড়িয়ে আনা হলনা চিকিৎসার জন্য?
হয়ত এসবের জবাব আছে সরকারের কাছে যা এখুনি সরকার দেয়নি। পরে পাওয়া যাবে উত্তর। তবে এসবের মধ্যেই নাকে মুখে ঝামা ঘষে বসে আছে গদি মিডিয়ার দল। ১৫তারিখের পর থেকে ভারতের ভূখন্ডের ভেতরে চিনের কল্পিত এগিয়ে আসা, ঘাঁটি গেড়ে বসা, রাস্তা বানানো, বাঙ্কার বানানোর যাবতীয় গল্পে জল ঢেলে দিয়েছেন মোদি নিজেই।