নিজস্ব সংবাদদাতা: শুক্রবার একই সাথে চারজন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলল খড়গপুর শহরে। আক্রান্তদের অবস্থান শহরের উত্তর থেকে দক্ষিন প্রায় ৫কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে পরপর চারটি কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করতে হল পুলিশকে। এর আগেও এর চেয়েও বেশি এক সঙ্গে ৬ জনের পজিটিভ এসেছিল রেল সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা আক্রান্ত হওয়ায় কিন্তু সেটা হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। এবার এক সাথে শহরের অনেকটা এলাকা বিস্তৃত হল কন্টেনমেন্ট জোনে।
শুক্রবার শহরের একেবারে উত্তর প্রান্তের বিদ্যাসাগরপুর এলাকায় এক যুবকের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। জানা গেছে নিজের করোনা আক্রান্ত এক ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সে কলকাতায় কিছুদিন ছিল। খড়গপুর রশ্মি মেটালিকসের ওই কর্মী যুবক পরে নিজে অসুস্থ বোধ করে। সন্দেহ হওয়ায় তারা লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে তার করোনা পজিটিভ আসে। তবে পুলিশের তরফে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে নিজের ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য কারখানা থেকে ছুটি নিয়েছিল ওই যুবক। পরে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে গত ১মাস যাবৎ কারখানায় যায়নি সে। ফলে তার থেকে কারখানায় কারও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা নেই।
শহরের দ্বিতীয় আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে একেবারে দক্ষিন প্রান্তে যা কিনা আক্রান্তের তালিকায় একেবারে নতুন এলাকা। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বরঞ্জন নগর বা সামপেটা বস্তি বলে পরিচিত এই এলাকার আরেকটি নাম টুরিপাড়া। এখানকার এক ব্যক্তি দিল্লি গিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে তাঁর লালারস পরীক্ষা হয় এবং শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এলাকাটি আইআইটি ক্যাম্পাসের গা ঘেঁষে। এতদিন অবধি শহরের মূলতঃ মধ্য অংশ ও মধ্যদক্ষিন অংশে করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিললেও একেবারে উত্তরে ইন্দা ও দক্ষিনে আইআইটি লাগোয়া এলাকায় করোনা আক্রান্তের সন্ধান এই প্রথম মিলল ফলে খড়গপুর শহরে আক্রান্তের মানচিত্র অনেকটাই বিস্তৃত হয়ে গেল।
তৃতীয় আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে খড়গপুর শহরের ঝুলি সংলগ্ন গোপালনগর এলাকায়। এক অবসর প্রাপ্ত রেলকর্মী কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। উল্লেখ্য শহরের এই ২৯নম্বর ওয়ার্ডেরই অংশে রেলের আরেক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। হৃদযন্ত্রের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যিনি পরবর্তীকালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই কলকাতার আর.এন.টেগোর হাসপাতালে মারা যান।
শুক্রবার শহরের চতুর্থ আক্রান্ত যুবক ৪নম্বর ওয়ার্ডের লোহানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার সেই রেলকর্মীর ছেলে যিনি কয়েকদিন আগেই করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মারা যান। ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া নিয়ে রেলের মেন হাসপাতালে ভর্তি হন ও পরের দিন মারা যান। চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর নমুনা সংগ্ৰহ হয় যা মৃত্যুর পরে পজিটিভ আসে। মৃত্যুর পরেই এই পরিবারের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করা হয় এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে মৃতের ছেলেরই কেবল পজিটিভ পাওয়া গেল।
উল্লেখ্য খড়গপুরে কর্মরত ৭ আরপিএফ জওয়ান সহ এ অবধি নূন্যতম ১৭জনের করোনা আক্রান্তের সন্ধান সরকারি ভাবে পাওয়া গেল। যার মধ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত এই শেষোক্ত চারজন যাঁদের শুক্রবার পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।
শহরে এখনো অবধি ৩জন করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মারা গেছেন। এই তিনজন মৃতের মধ্যে উল্লেখিত ২জন ছাড়া অন্যজন ৫নম্বর ওয়ার্ডের দেবলপুরের বাসিন্দা যিনি গোলবাজারে টিনের সুটকেস নির্মান করতেন।
৭জন আরপিএফ কর্মী ছাড়াও খড়গপুর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারি ঠিকাদার ও তাঁর এক কর্মী, ছোট আয়মার তরুনীকে ধরে ১০ জন বর্তমানে সুস্থ। এদিন রাতেই খবর পাওয়া মাত্রই তৎপরতার সঙ্গে চারটি জায়গায় কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করে দিয়েছে পুলিশ।