নিজস্ব সংবাদদাতা: এক কিশোরী বধূকে হত্যার অভিযোগে খড়গপুর গ্রামীন থানার অধীনে কর্মরত এক সিভিক ভলেনটিয়ার্সকে গ্রেপ্তার করল স্বামী। মাত্র ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার সাড়ে চোদ্দ বছর বয়সেই তাকে বিয়ে করেছিল এই সিভিক ভলেনটিয়ার্স। বধূর বাপের বাড়িটির আপত্তিকে সে তার পুলিশি প্রভাবের ভয় দেখিয়ে অগ্রাহ্য করেছিল এমনটাই অভিযোগ কিশোরীর বাবা মার। মঙ্গলবার সকালে খড়গপুর শহর লাগোয়া ঘাগরা গ্রামের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় জুঁই পাত্র নামে ওই কিশোরীর দেহ।
জুঁইয়ের বাবা পেশায় মন্ডপ বানানোর মিস্ত্রি সুবল পাত্র জানিয়েছেন, “আমাদের তালবাগিচার বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি দু’কিলোমিটারের মধ্যেই। খবর পেয়েই ছুটে যাই মেয়ের বাড়ি। গিয়ে দেখি খাটের পাশেই একটি আলনা সেই আলনার এক প্রান্তে দড়ি বাঁধা আর অন্যপ্রান্তটি মেয়ের গলায়। মেয়ের খাটের ওপরে বসে রয়েছে। ঝুলে পড়ার কোনও অবস্থাই নেই। এই অবস্থায় কেউ গলায় দড়ি দিতেই পারেনা। মেয়েকে আমার জামাই ও শাশুড়ি মিলে মেরেই ফেলেছে।”
কিশোরী বধূর মা গীতা জানিয়েছেন, ” দেড় বছর আগে খগেন পাত্র প্রায় জোর করেই বিয়ে করে আমার মেয়েকে। আমরা রাজি ছিলামনা। কিন্তু ও আমার মেয়ের নাবালকত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে প্রভাবিত করে। আমাদের বলে আপনারা পুলিশে গিয়েও আমাদের বিয়ে আটকাতে পারবেননা কারন আমি পুলিশেরই স্টাফ। বাধ্য হয়েই আমরা মেনে নেই। বিয়ের কয়েকমাস পর থেকেই স্বরূপ খুলতে শুরু করে খগেনের। একের পর টাকা পয়সা চেয়ে চাপ দিতে থাকে আমাদের ওপর। না দিলেই মেয়েকে মারধর। মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে দেরিতে হলেও সব দিয়েছি, এমনকি টাকা পয়সাও। এরপরই ওর নতুন চাহিদা হয় একটা বাইক দিতে হবে। মেয়ের শান্তির কথা ভেবে সম্প্রতি একটি স্কুটি কিনে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জামাইয়ের পাশাপাশি মেয়েও চালাবে কিন্ত তারপরেও ওরা আমাদের মেয়েকে একেবারেই মেরে ফেলবে ভাবতেই পারিনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে জুঁইয়ের ওপর এর আগেও শারীরিক নির্যাতন হয়েছে এবং বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে তালবাগিচার কাউন্সিলর ও ঘাগরার পঞ্চায়েত সদস্যরা বসে মিটিয়েও দিয়েছে কিন্তু কোনও বারই বিষয়টি থানা অবধি গড়ায়নি কারন বরাবর অভিযুক্ত খগেন তার সিভিক ভলেনটিয়ার্স প্রভাবকে কাজে লাগিয়েছে যে থানা তার বিরুদ্ধে কোনোও অভিযোগই নেবেনা।
খগেনের মা শ্যামলীর বক্তব্য, “গতকাল রাত ১১টার সময় বউমা হঠাৎ করে স্কুটিটি চালাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাড়ির বউ অত রাতে স্কুটি চালাবে, চালিয়ে কোথায় যাবে এই কারনে আমরা স্কুটি চালাতে দেইনি। তাতে ও কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু তারজন্য আত্মহত্যা করবে ভাবতেই পারিনি। সকালে আমার ছেলে আমাকে চিৎকার করে ডাকলে আমি গিয়ে দেখি এই কান্ড। ঘরে ওরা দুজনেই শুয়েছিল তারপর কি হয়েছে, আদৌ কিছু হয়েছিল কিনা জানিনা।”
মঙ্গলবার তালবাগিচার কিছু বাসিন্দা খগেনের বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। খবর যায় পুলিশে। মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি মা ও ছেলেকে তুলে আনে পুলিশ। জনতার রোষে কিছু হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই প্রথমে তুলে আনা হয়। বধূর গলার দাগ সম্ভবত পুলিশকে বুঝতে সাহায্য করে যে এ দাগ দড়ির নয়, বরং অনেকটাই শ্বাস রোধ করার হাতের চাপ। তারপরেও পুলিশ অপেক্ষা করছিল ময়নাতদন্তের জন্য। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের ইঙ্গিতে পুলিশ রহস্যের গন্ধ পায়। ইতিমধ্যে জুঁইয়ের বাপের বাড়ির তরফে অভিযোগ দায়ের হয়। ওই অভিযোগে খগেন ও তার মা শ্যামলীকে অভিযুক্ত করা হয়। তুলে আনার পরই আটক করা হয়েছিল খগেনকে। অভিযোগ আসার পরই রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও শ্যামলীকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,খগেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর শ্যামলীর ভূমিকা বোঝা যাবে। তারপরই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।