নিজস্ব সংবাদদাতা: ১১ বছর আগে মাওবাদী নেতা কিষানজীর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল এনায়েৎপুর। কিষানজী আর বিকাশের নেতৃত্বে সশস্ত্র খুনে বাহিনীকে যে গ্রাম ১২ ঘন্টার লড়াইয়ে রুখে দিয়েছিল যে গ্রাম সেই গ্রামের নাম এনায়েৎপুর। একে ৪৭ আর কার্বাইন নিয়ে হামলা চালানোর জবাব পাল্টা অস্ত্রেই পেয়েছিল জঙ্গলমহলে খুনের রাজত্ব কায়েমকারীর দল। শোনা যায় পুলিশ বিহীন বাঁচতে শেখা সেই এনায়েৎপুর থেকে ভোর রাতে নিজের বাহিনীর ৫/৬টি লাশ নিয়ে পালাতে হয়েছিল কিষানজীকে। প্রায় একদশক পরে সেই এনায়েৎপুরকে জ্বলে উঠতে দেখা গেল সোমবার। এদিন দফায় দফায় স্থানীয় জনতার বিক্ষোভ আর অবরোধে নাজেহাল হতে হল পুলিশকে। সকাল থেকে চলা মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ অনেক কষ্টে প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হয় সন্ধ্যার মুখে।
কিন্ত কেন জনতার এই রুদ্ররোষ? খবর নিয়ে জানা গেল টানা ৭২ ঘন্টা বন্দি এনায়েৎপুর গ্রাম! গ্রামের নিজের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন, অন্য গ্রামের দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দেওয়া তো দুরের কথা, সেই গ্রামে পা রাখতেই দেওয়া হয়না। এমনকি গরু চরাতেও বাধা। লাগাতার তিনদিনের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠল গোটা গ্রাম, দিনভর চলল রাজ্য সড়ক ঘিরে অবরোধ বিক্ষোভ, অবরোধ তুলতে নাজেহাল পুলিশ। সোমবার এমনই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকের জঙ্গলমহল এনায়েতপুর।
গত ৩০তারিখ গ্রামে ফিরেছিলেন গুজরাটে কর্মরত এক যুবক। পরে যার করোনা পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্ৰহ করা হয়। ১১দিন পর ওই যুবকের রেজাল্ট আসে পজিটিভ। শুক্রবার রাতে যুবককে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় গুরগুড়ি থানার পুলিশ। বাফারজোন করে দেওয়া হয় গ্রামকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় এনায়েৎপুরের নিজস্ব বাজার। নিয়ম অনুযায়ী বাফার জোনের লোকেদের হয় নির্দিষ্ট লোকেদের পাশ দেওয়া হবে বাজার ইত্যাদির প্ৰয়োজনে বাইরে যেতে অথবা পুলিশ তাদের চাহিদা পূরণ করবে। কিন্তু এনায়েৎপুরের দাবি পুলিশ তাঁদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যোগান দেয়নি। পাশের গ্রাম মুনিদহ বা আশেপাশের গ্রামে বাজার করতে যাওয়া তো দুরের কথা গ্রামেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি করোনা আক্রান্ত বলে।গ্রামের লোকেদের আরও অভিযোগ, তাদের গ্রামের গরু ছাগল চরা অবধি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৭২ ঘন্টা এই মানসিক চাপ নেওয়ার পর সোমবার সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষেরা। গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া মূল রাস্তাটি অবরোধ করেন তারা।আশেপাশের গ্রামগুলির লোকেরা আটকে পড়েন, যাতায়ত বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ এসে অবরোধ তোলার জন্য কথাবার্তা চালাতে থাকে। ঘটনাক্রমে এই সময় সেই যুবককে নেগেটিভ বলে ছেড়ে দেয় স্বাস্থ্যদপ্তর। শুক্রবার থেকে পরপর দুবারই নতুন করে টেস্ট করার পর দুবারই তার নেগেটিভ এসেছে। ওই যুবক গ্রামে ফিরতেই আরও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন জনতা। পজিটিভ রুগী কী করে দুদিনেই নেগেটিভ হয়ে যায়? তাহলে ভুল করে তাকে পজিটিভ বলা হয়েছিল দাবি করে জনতা এবার দাবি করতে থাকেন, প্রশাসনের ভুলেই তাঁদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। বিক্ষোভ এবার আরও জোরালো হয়।
এদিকে দীর্ঘক্ষন বিক্ষোভ চলতে থাকায় ধৈর্যচ্যুতি ঘটে পুলিশের। জনতার উদ্দেশ্যে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে এমন অভিযোগে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। গ্রামের রাস্তা ছেড়ে জনতা এবার চলে আসেন মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে। অবরোধে আটকে পড়ে সমস্ত গাড়ি, সাধারন মানুষ। খবর পেয়ে মেদিনীপুর পুলিশ লাইন থেকে ছুটে যান শীর্ষ আধিকারিক সহ বিশাল বাহিনী। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর জনতাকে শান্ত করে অবরোধ তুলতে সক্ষম হয় পুলিশ,তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে।