নিজস্ব সংবাদদাতা: সেই ধাঁধাটা আরেকবার মনে করুন, “একটি পুকুরে প্রতিদিন দ্বিগুন হারে কচুরি পানা বাড়ে। ১৫ দিনে পুকুরটা অর্ধেকটা পুকুর ভর্তি হলে পুরো পুকুর ভর্তি হতে ক’দিন লাগে?” না, উত্তরটা আপনার জানা যে, পরের দিনই অর্থাৎ ১৬ দিনেই পুকুরটি ভর্তি হয়ে যায় কিন্তু বাস্তবে আমরা বোকা হয়ে যাই আর পড়া না পারা ছাত্রের মত বলি, “১৫ দিনে যদি অর্ধেক ভর্তি হয় তবে দ্বিগুন মানে ৩০ দিন লাগবে পুকুর ভর্তি হতে।” তাই না ?
দু’সপ্তাহ সময় লাগল না। পাঁচ হাজার থেকে এক লাফে ১০ হাজার ছাপিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। দিনটা আরেকবার মনে করুন, ১৮ই মার্চের সেই হই চই! কী, না রাজ্যে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
লন্ডন ফেরত এক আমলার ছেলে করোনা নিয়ে নবান্ন ঘুরে বেরিয়েছে আর তার জেরে রাজ্যের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আলাপন বন্দোপাধ্যায় স্ত্রী সমেত নিভৃতবাস বা কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। সেই প্রথম আক্রান্ত থেকে শুরু করে তার পর ৫৯ দিনের মাথায় রাজ্যে আক্রান্তর সংখ্যা ২৫০০ টপকেছিল। আর তার ১৪ দিন পর ৩০ শে মে আরও আড়াই হাজার বেড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০০ গণ্ডি ছাড়ায়। মনে রাখুন, ১৪ দিনে বাড়ল ২৫০০।
আর আজ, শুক্রবার ,১২ই জুন মাত্র ১৩ দিনে দ্বিগুন অর্থাৎ ৫০০০ হাজার বেড়ে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত ১০,২৪৪ জন ! তাহলে ভাবতে হবে রাজ্যে করোনা ঠিক সেই কচুরি পানার মতই বাড়ছে কী না? দিন দশেক আগেই এই হিসাব ধরেই ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে জুনেই পশ্চিমবঙ্গের কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার পৌঁছাবে। আশাকরি এবার আর এটা বুঝতে না পারার কথা নয়। কারন এখন স্পষ্ট যে চলতি বৃদ্ধির হারে ১৩দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা আর মাস শেষ হতে আমাদের হাতে রয়েছে এখন ১৮ দিন।
বৃদ্ধির এই হার রুখে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। একটা সম্ভবনা আছে তা’হল পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে আসার সংখ্যা এবার কমবে কারন বেশিরভাগই চলে এসেছেন আর দ্বিতীয়ত যদি একের থেকে অপরের সংক্রমন কমানো যায়। এই দুটি শর্ত ঠিকঠাক থাকবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। তবে পাশাপাশি আরও একটা কথা ফিরে আসা শ্রমিকদের সবারই পরীক্ষা হয়ে গেছে কী? মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দাবি করেছেন যে রাজ্যে মোট ১১লক্ষ শ্রমিক ফিরেছেন আরও ৩০ হাজার ফিরবেন। যদিও সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়ার কথা কারন সবার ফেরাটাই সরকারের নজরে নেই।
শুক্রবার সরকারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৬। এক দিনে আক্রান্তের হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এ পর্যন্ত রাজ্যে করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মৃতের সংখ্যা ৪৫১। রাজ্য সরকারের হিসেবে এর মধ্যে কোমর্বিডিটির লক্ষণ ছিল ৩০৬ জনের, যা মোট মৃতের ৬৭.৮ শতাংশ।
দৈনিক নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যায় দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য এখনও উদ্বেগজনক জায়গাতেই রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্য ভিত্তিক মোট আক্রান্তের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশে এখন অষ্টম স্থানে। মৃত্যুর নিরিখে চতুর্থ।