নিজস্ব সংবাদদাতা: শালবনী হাসপাতালের পর এবার বিপিও বা বিজনেস প্রসেস আউট সোর্সিং থেকেও হাত গুটিয়ে নিল জিন্দালরা। দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী যখন বারবার আবেদন বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে জানাচ্ছেন যে লকডাউনের সময় কারও বেতন কাটবেননা, কাউকে ছাঁটাই করবেননা তখন একটি সামাজিক কল্যানমূলক প্রকল্প(সিএসআর) থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে জিন্দাল গোষ্টি, কেড়ে নিল ৬৮ জনের কর্মসংস্থান যার মধ্যে ৬২ জনই মহিলা।
বিপিওটির ম্যানেজার রাহুল দেব সরকার যিনি ব্যাঙ্গালুরুর ১ লাখি চাকরি ছেড়ে প্রায় অর্ধেক বেতনে এখানে দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন জুন’২০১৯ য়ে একরাশ হতাশা নিয়ে জানিয়েছেন, “আগামী ৩০শে জুন থেকেই প্রোজেক্ট তুলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জিন্দালরা তবে ধরে নিতে পারেন এখন থেকেই প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে গেছে।”
গত সেপ্টেম্বর থেকে জোর কদমে কাজ শুরু করেছিল এই বিপিওটি। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির বিল তৈরি করে দেওয়া, আ্যকাউন্টস ইত্যাদি থার্ডপার্টির কাজ করত এই বিপিওটি। পাশাপাশি একটি কলসেন্টার চালানো হত এখান থেকেই। যার জন্য জেলাপরিষদ একটি জায়গাও দেয়। গত বছর জুন জুলাই আগস্ট এই তিনমাস প্রশিক্ষন দিয়ে তৈরি করা হয় ৫৭ জন মহিলাকে। এরপর কাজ শুরু।
বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিভিন্ন কাজ এনে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়াতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এপ্রিল থেকেই বেতন পাননি বিপিওর কর্মীরা এরপর সরাসরি বজ্রাঘাতের মতই এই দুঃসংবাদ। লকডাউনের জন্য মার্চ থেকে কাজ পায়নি মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মধ্যে সবে মাত্র সাজিয়ে গুছিয়ে বসা এই সংস্থার কাছে এমনই দুঃসংবাদ এসে পৌঁছেছে।
রাহুল জানিয়েছেন, “সিএসআর প্রোজেক্ট মানে কোনও লাভজনক প্রোজেক্ট নয়, মূল শিল্পকে ঘিরে থাকা আশেপাশের মানুষদের জন্য সামাজিক কল্যান মূলক একটি প্রকল্প বলেই জানতাম। তবুও আমরা কাজ পেতে শুরু করেছিলাম এবং কোম্পানিকে বলেছিলাম আর কয়েকটা মাস সময় দিতে কারন আমরা যেভাবে কাজ পেতে শুরু করেছিলাম তাতে কয়েকমাসের মধ্যে না লাভ না ক্ষতির ভিত্তিতে বিপিওকে তুলে আনতাম। এরমধ্যেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। আমরা ভেবেছিলাম লকডাউন উঠলেই ফের জায়গায় ফিরে আসব কিন্তু কোম্পানি সে সুযোগ দিলনা।”
রাহুলের আক্ষেপ ,” ব্যাঙ্গালুরুর চাকরি ছেড়ে এসেছিলাম একটা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে। সেটা হল শুধু নিজে নয় আশেপাশের কিছু মানুষদের স্বাবলম্বী করে তুলব, সেই মত ৬২ জন মহিলাকে প্রশিক্ষিতও করলাম কিন্তু এখন সব ইতিহাস হয়ে গেল!”
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী থানার এক প্রান্তিক গ্রামে জিন্দালদের ফ্যাক্টরির আশেপাশের গ্রামগুলি থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল ওই ৬২ জন মহিলাকে। ম্যানেজার, এইচআর, ইলেক্ট্রিশিয়ান, নিরাপত্তারক্ষী ইত্যাদি মিলিয়ে ৬৮জন কর্মী এখন গভীর অন্ধকারে। এদের অনেকেই এই বিপিওর ওপরেই নির্ভর করে সংসার চালাতেন। কেউ সদ্য বিয়ে করেছেন আবার কেউ হয়েছেন সদ্য মা।
আগেই শালবনীর হাসপাতাল থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল জিন্দালরা। প্রায় ২০০জনের জীবিকা সেখানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এবার নতুন করে আবার ৬৮ জন। তবে এখানেই থামা নয়, শোনা যাচ্ছে মাসে প্রায় ৩কোটি লোকসানে চলা জিন্দালদের মূল কারখানা জেএসডব্লিউ সিমেন্টই এখন অস্থিত্ব সঙ্কটের মুখে।
ইস্পাত কারখানার নাম করে সাড়ে চারহাজার একর জমি নিয়েছিল জিন্দালরা যার মধ্যে প্রায় ৩০০একর ছিল চাষিদের। প্রতিশ্রুতি মত জমিদাতাদের প্রায়১১০০জনের কর্মসংস্থানের কথা ছিল কিন্তু সাকুল্যে কাজ মিলেছে ২৫০জনের। অথচ বাইরের প্রদেশ থেকে ৫০০শতাধিক মানুষকে নিয়োগ করেছে জিন্দালদের ঠিকাদার সংস্থাগুলি। ইস্পাত থেকে সিমেন্ট হয়ে যাওয়া আর স্থানীয় মানুষদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি না রাখার সেই বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ স্থানীয় মানুষের ঘরে ঘরে। এবার ফের সেই বিশ্বাসঘাতকতারই অভিযোগ উঠে আসল জিন্দাল গোষ্ঠির বিরুদ্ধে। ছবিটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মধ্যে থাকা সেই বিপিওর