ওয়েব ডেস্ক : সমস্ত কলকাতা ঘুরে একটা হাসপাতাল জোটেনি বৃদ্ধের,লকডাউনে খাবারও জোটেনি ঠিক মত। কল্লোলিনী কলকাতায় তাই নিজেদের ব্রাত্য মনে করেছিলেন ওঁরা। চির অভাব থেকে মুক্তি পেতে এত কিছু না জুটলেও বিষ জুটিয়ে নিয়েছিলেন ঠিক। তাই পান করে চিরকালের মত চলে গেলেন কলকাতার তিন নাগরিক। লিখে রেখে গেলেন, আমরা ৩ জনই মৃত। ছাপোষা মানুষ, কবি হলে হয়ত লিখে যেতেন, গোটা কলকাতাই মৃত।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মহানগরের ঠাকুরপুকুর থানার সত্যনারায়ণ পল্লি এলাকায় ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ বর্তমানে ততটাই তৎপর ঠিক যতটাই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে পরিবারের বৃদ্ধ কর্তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে। মঙ্গলবার তিনটি দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছবি তোলা হয়েছে আত্মহত্যার আগে মেঝেতে চক দিয়ে লিখে যাওয়া ‘আমরা তিনজনেই মৃত’ ঘোষনাপত্রটির। পাওয়া গেছে খাটের উপরে একটি বাটির গায়ে লেখা ‘বিষ আছে সাবধান।’ এ জাতীয় বেশ কিছু কথা লেখা দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঠাকুরপুকুর থানার সত্যনারায়ণ পল্লি এলাকার বহুদিনের বাসিন্দা বছর ৮০ র গোবিন্দ কর্মকার ও তার পরিবার। স্ত্রী রুনু কর্মকার(৭০) এবং জন্ম থেকেই পঙ্গু বছর পঞ্চাশের ছেলে দেবাশিসকে নিয়েই তাঁর ছোট্ট পরিবার। গত কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন গোবিন্দ বাবু। এরপর রবিবার আচমকা রাস্তায় অচৈতন্য হয়ে যান তিনি। তার শরীরে জ্বর আছে বুঝতে পেরে স্থানীয়দের তরফে প্রথমে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঠাকুরপুকুর থানায় খবর দেওয়া হয়। এরপর থানা থেকে একটি গাড়ি পাঠানো হলে ওই গাড়ি করেই গোবিন্দ বাবুকে বেহালা বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এমনকি তাকে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরা হলেও কোথাও তাকে রাখতে চাননি৷
অবশেষে অ্যাম্বুলেন্স চালক বাড়ির রাস্তার মোড়ে এসে গোবিন্দ বাবুকে বাড়ি অবধি পৌঁছে দিতে অস্বীকার করেন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে স্ট্রেচারে করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। একদিকে তার গা ভরতি জ্বর, অন্যদিকে এতগুলো হাসপাতাল ঘোরার পরও তাকে সবাই ফিরিয়ে দেওয়ায় তিনি মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছিলেন। তাছাড়া লকডাউনের জেরে কয়েকদিন আগেই কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ খানিকটা চিন্তিত ছিলেন গোবিন্দ বাবু। মঙ্গলবার সকালে দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও সাড়া না মেলায় অবশেষে এলাকাবাসীরা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা খুলে দেখেন ভিতরে পড়ে আছে তিনটি নিথর দেহ। আর মেঝেতে চক দিয়ে লেখা ‘আমরা তিনজনেই মৃত।’ খাটের উপরে একটি বাটির গায়ে লেখা ‘বিষ আছে সাবধান।’ এরপর পুলিশ দেহ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়
ঠিক কি কারণে গোবিন্দ কর্মকার পুরো পরিবারকে নিয়ে আত্মহত্যা করলেন তা জানা না গেলেও এর পিছনে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকে মানসিক চাপকেই দায়ী করছেন অনেকে। তবে এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকাতে কিন্তু প্রশ্ন উঠছে। কারণ, স্থানীয় সূত্রে খবর গোবিন্দ বাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়ে পুলিশের বেশ খানিকটা গাফিলতি রয়েছে, প্রথমত, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ যখন গাড়ি পাঠিয়েছিলেন তখন পুলিশের দায়িত্ব ছিল রোগী হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, তার গায়ে জ্বর থাকায় গোবিন্দ বাবুকে করোনা সাসপেক্ট মনে করা হচ্ছিল। যদি তাই হয় তবে, খাস কলকাতার বুকে এতগুলো করোনা হাসপাতাল থাকতেও পুলিশ কেন করোনা পরীক্ষা হয়না এমন হাসপাতালে নিয়ে গেলেন? কেনই বা পুলিশি সহযোগিতায় তাকে বাড়ি ফেরানো হল না। কার্যত এই অপমানগুলোই নিতে পারেননি গোবিন্দ বাবু। ফলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
প্রতিবেশীরা বলছেন, শুধু এটাই যথেষ্ট কারন নয়, ৮০ বছরের বৃদ্ধ একটা গোটা জীবন ধরেই টেনে আসছিলেন নিজের সহ তিনটি প্রান। এখানে ওখানে ওই বয়সেই খেটেখুটে সংসার চালাতেন যা ইদানিং পেরে উঠছিলেননা। তার ওপর লকডাউনে কাজ কর্মও জুটছিলনা। নিয়ম অনুযায়ী গোবিন্দবাবুর বার্ধক্য ভাতা এবং ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু তিনি কী এসব পেতেন? খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।