নিজস্ব সংবাদদাতা: শরীর খারাপ বলে ছুটি চেয়েছিল কিশোর কিন্তু ছুটি পায়নি, করোনায় আক্রান্ত অবস্থাতেই বাবার হয়ে ‘হালকা’ কাজ দেওয়া হয়েছিল। একতলা, দোতলায় রুগীদের কাছে খাবারের গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজ। বাবার শরীর খারাপ কিন্তু তাতে ঠিকাদারের কী যায় আসে? সংসারের সুরাহা করতে তাই বাবার হয়ে নিজেই খেটে দিত খড়গপুর গ্রামীন থানার লছমাপুরের ১৭বছর। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সেই ১৭বছরের ছুটি মেলেনি অসুস্থ হবার পরও। ছুটির পরিবর্তে তাঁকে খড়গপুর স্টেশনে আসা শ্রমিক স্পেশালের ডিউটিও সামলাতে হয়েছে। ক’দিন পরেই তার কোভিড পজিটিভ আসে। সোমবার জানা গেছে ওই কিশোরের সূত্র ধরেই আক্রান্ত হয়েছেন ঠিকাদারও, কাজেই পাপ যদিও বাপকে ছেড়েও দেয়, করোনা ছাড়েনা!
সোমবার সকালেই খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের ওই ঠিকাদার যিনি আসলে বহু আগেই কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর স্ত্রীর নামেই ঠিকাদারি চালান, রুগীদের খাবার সরবরাহ করেন, আক্রান্ত হয়েছেন বলে। খবর পাওয়া গেছে। এঁর আগে হাসপাতালের জমিতে সবজি ফলানো, হাসপাতালের ভেতরে হাঁসের চাষ করা থেকে একাধিক ভালো ভালো কাজ করেছেন সেটা ঠিক ছিল কিনা কে জানে কিন্তু অসুস্থ কিশোরকে ছুটি না দিয়ে যে মোটেই ভালো কাজ করেননি তা করোনা বুঝিয়ে দিল। সোমবার সকালেই খড়গপুর পৌরসভার সুভাষপল্লী এলাকায় ওই ঠিকাদারের বাড়ি সংলগ্ন এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জোন বলে ঘোষনা করা হয়েছে। সিল করে দিয়ে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে।
অন্যদিকে এদিনই আরও ২জনের কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেছে খড়গপুর শহরের দেবলপুর এলাকায় যেখানে আক্রান্ত হয়েছেন মা ও মেয়ে। অবশ্য এক্ষেত্রে সংক্রমনের সূত্র খুবই দুঃখ জনক। আক্রান্ত এই পরিবারের কর্তা গোলবাজারের একটি টিনের বাক্স নির্মান কারখানার মালিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৯মে মারা গিয়েছিলেন গ্লোকাল হাসপাতালে। মৃত্যুর পরেই অবশ্য জানা গিয়েছিল যে তিনি করোনা পজিটিভ। জেলায় সেটাই ছিল সরকারি ভাবে ঘোষিত প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরই স্ত্রী ও মেয়ে আক্রান্ত হওয়ায় এলাকায় সামান্য হলেও আতঙ্ক কাজ করছে।
অন্যদিকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে কিশোর আক্রান্ত হওয়ার পর খাবার সরবরাহ বিভাগের ঠিকাদার সহ যে ১৭জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল তার ১৬ জন নেগেটিভ হয়েছে। দেবলপুরের মৃত ব্যক্তির পরিবারের ৮ জনের মধ্যে মা মেয়ে বাদ দিলে বাকি ৬ জনই নেগেটিভ। এদিন নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর গাড়ির চালককের যিনি খড়গপুরের বাসিন্দা। অন্যদিকে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অসুস্থ বোধ করায় স্বেচ্ছা নিভৃতবাসে গেছিলেন তাঁরও ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। শুধু দুশ্চিন্তায় সুভাসপল্লীর বাসিন্দারা। কারন তাঁদের অভিযোগ আক্রান্ত ঠিকাদার ও তার পরিবার কোয়ারেন্টাইন নিয়ম না মেনে পাড়ায় ঘুরেছেন ও দোকান বাজার করেছেন যদিও এটা অস্বীকার করা হয়েছে ঠিকাদারের তরফ থেকে।