নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্যের করোনা মানচিত্রে রীতিমত সাড়া ফেলে দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। সমস্ত নজির ভেঙে দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় ২৪ঘন্টায় নতুন করে ৯৩ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে জেলায়। রাজ্যের সর্বাধিক সংক্রমিত এলাকা কলকাতা,হাওড়া, উত্তর ২৪পরগনা ও হুগলি বাদ দিয়ে একই দিনে এত পরিমান আক্রান্তের সন্ধান আগে কোনও জেলায় পাওয়া যায়নি। শনিবার সন্ধ্যা অবধি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৩, তার সাথে নতুন আরও ৯৩ জন ধরে সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯৬ জনে। বৃদ্ধির হারে যা ৯৫.৭৯%। বৃদ্ধির এই হার রাজ্যের মধ্যে সেরা।
যদিও জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে বিষয়টি তে অস্বাভাবিক কিছুই নেই। যে হারে পরিযায়ী শ্রমিকরা জেলায় ফিরছেন এবং জেলায় করোনা পরীক্ষার পরিমান যেভাবে কয়েক গুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাতে এটাই স্বাভাবিক। আর আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। মোটামুটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে বাইরের রাজ্য থেকে ফিরে আসা ৭৫% য়ের দেহেই করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে।
যে নতুন ৯৩ জন আক্রান্ত মিলেছে এখনও অবধি সামগ্রিক সিলমোহর জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে দেওয়া হয়নি।
এটা জানা গেছে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিও এবং থানাগুলিতে স্বাস্থ্য দপ্তর যে তালিকা পাঠিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা দাবি করেছেন তারই ভিত্তিতে। যেমন দাসপুর ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুনীল ভৌমিক জানিয়েছেন যে তার কাছে দাসপুরের ২৭ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে শনিবার অর্থাৎ ৬জুন জেলার পরীক্ষায় মোট ৯৩ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে এদের মধ্যে ৭জনের থানা এলাকা নিশ্চিত করা যায়নি বাকি ৮৬ জন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার। লক্ষ্য করার মত যে এই ৮৬ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬১ জনই ঘাটাল মহকুমার। যার মধ্যে দাসপুুর থানার ৪০ ছাড়া ঘাটাল থাানার ১৮ ও চন্দ্রকোনা থানার ৩ জন রয়েছেন । বাকি ৩২ জনের মধ্যে কেশপুর, আনন্দপুরে , গোয়ালতোড় , পিংলা, দাঁতন, গড়বেতা কোতোয়ালি থানার নতুন আক্রান্তরা রয়েছেন।তবে এই রিপোর্ট অনুযায়ী এ যাবৎ কালের সমস্ত রেকর্ডই ভেঙে দিল ঘাটাল। মাত্র একটি মহকুমাতেই ৬১ জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যাওয়ায় করোনা পর্বে এটি একটি বড় সড় রেকর্ডও বটে আর নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা করোনায় ডবল সেঞ্চুরিও হাঁকাতে চলেছে শীঘ্রই।
৬ তারিখেই দাসপুর থানা থেকে এসেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে তৃতীয় মৃত্যুর খবর এসেছে। মৃত ব্যক্তির নাম কার্ত্তিক মন্ডল। দাসপুর থানার বরুনা গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছরের কার্ত্তিক দিল্লিতে সোনার কাজ করতেন। ১৪দিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার কথা হলেও তিনি বাড়িতে ছিলেন এবং সম্ভবত তার কোনোও টেস্ট হয়নি। বাড়িতেই জ্বর আর তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন। কিন্তু অবস্থার সাংঘাতিক অবনতি হওয়ায় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে আনা হয় কিন্ত সম্ভবত আগেই মারা যান তিনি। চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁর মৃতদেহ রেখে দেওয়া হয় এবং নমুনা সংগ্ৰহ করা হয় পরীক্ষার জন্য যা ৬ তারিখ পজিটিভ এসেছে। কার্তিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যান সমিতির সদস্য পঞ্চানন মন্ডল। হিসাব অনুযায়ী এর আগে দাসপুর এবং খড়গপুর মিলিয়ে জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ২জনের, কার্তিকের মৃত্যু ধরে তা ৩জন হল।
হিসাব বলছে শুধুমাত্র ঘাটাল মহকুমাতেই ৫০হাজার স্বর্নশিল্পী রয়েছেন যাঁর ৯০%ই ভারতের সর্বাধিক সংক্রামিত মুম্বাই, দিল্লি, তামিলনাড়ু, গুজরাটে কর্মরত ছিলেন। এদের মধ্যে দাসপুর থানার স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যাই বেশি। শনিবার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পরীক্ষার ফলাফলেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। ঘাটাল মহকুমার ৬১ জন আক্রান্তের ২৭জনই দাসপুর ১ ও ১৩ জন দাসপুর ২ ব্লকের, চন্দ্রকোনার ৩ জন ও ঘাটাল ব্লকের ১৮জন।
সরকারি হিসাব বলছে, লকডাউন পর্বের শুরু থেকে দাসপুরেই ফিরেছেন ২৩ হাজার শ্রমিক, ফেরার অপেক্ষায় আরও অন্তত ১০ হাজার। সারা জেলার হিসাব ধরলে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আরও কত ফিরতে পারে সরকারি ভাবে হিসাব করা মুশকিল তবে বেসরকারি ভাবে আরও ৫০হাজার প্রায়। স্বাভাবিক ভাবেই আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। আর সে কারনেই বড়মা, আয়ুষ ও গ্লোকাল ছাড়াও শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার কাজ জোর কদমে শুরু হয়েছে।