নিজস্ব সংবাদদাতা: আমফান খেয়ে নিয়েছিল ১২আনা ফসলই। বাদ বাকি মাঠে পড়ে থাকা চার আনা ফসল ঘরে তুলতে পারলে যদি খরচের কিছুটাও সুরাহা হয় তাই মাঠে গিয়েছিল বাপ ব্যাটা। এ মরশুমে বৃষ্টি আর ঝড়ের শেষ নেই। আমফানের পরেও গেছে দু’দুবার ঝড়বৃষ্টি হয়ে গেছিল। শেষ বৃষ্টি গেছে সোমবার। মাঠে কাটা হয়ে গিয়েছিল তিল গাছ। একটু রোদ খাইয়ে তুলে নেবে এমনই ইচ্ছা। বৃহস্পতিবার ফের মেঘ দেখে তড়িঘড়ি ছুটে গেছিল বাবা ও ছেলে কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা এতদিন ফসল গেছিল এবার ছেলেও গেল।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানা এলাকার ধলহারা গ্রামের ঘটনায় শোকে ভেঙে পড়েছে প্রায় গোটা গ্রাম। সামান্য একটু বৃষ্টির মাঝেই একটা হঠাৎ করে নেমে আসা বাজ কেড়ে নিয়েছে গ্রামের তরতাজা যুবক প্রলয় খামরুই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রলয় মাঠের মধ্য থেকে কাটা তিলের বোঝা নিয়ে এসে রাখছিল আলের ওপর। বাবা আলে দাঁড়িয়ে সাজিয়ে রাখছিল। দুজনের মধ্যে মাত্র ১৫ হাতের তফাৎ। বিকাল বেলায় টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিল বলে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছিল প্রলয়। হঠাৎ ঝলসে যাওয়া আলোর সাথে প্রকান্ড আওয়াজ।
প্রলয়ের বাবা স্বপন জানিয়েছেন, “আলোর ঝলসানিতে চোখ পুড়ে গেছিল যেন। কান ফাটানো আওয়াজে কানে তালা পড়ে গিয়েছিল। সামলে উঠতে মিনিট কয়েক লেগেছিল। তারপর মাঠের মধ্যে তাকিয়ে দেখি ছেলে নেই, যেন উধাও হয়ে গেছে চোখের সামনে থেকে। কিছু বুঝে উঠতে পারিনি প্রথমে তারপর মাটির দিকে চোখ পড়তে দেখি ছেলে পড়ে রয়েছে মাটিতে।”
কিছুটা দুরে থাকা মাঠের মধ্যে থাকা গ্রামের অন্য লোকেরা, গ্রামের মধ্যে থাকা লোকেরা দৌড়ে আসেন। প্রলয়কে নিয়ে ছুটে যাওয়া হয় স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কিন্তু ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল তার। শেষ অবধি মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।অত্যন্ত হাসিখুশি প্রানখোলা প্রলয় বাবাকে চাষে সাহায্য করার পাশাপাশি অন্য কাজও করত। তার অকাল মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া। বৃহস্পতিবার বাজ পড়ে আরও একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মেদিনীপুর শহরের অদূরেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া ফুলপাহাড়ি নামক জায়গায়। স্থানীয় বিদ্যাসাগরপল্লীর এক বাসিন্দার বাড়ির ছাদে কাজ করছিলেন এক রাজমিস্ত্রি। মুর্শিদাবাদের ওই মিস্ত্রি সেক গনি বৃষ্টি পড়া শুরু হতেই সদ্য শেষ করা কাজ পলিথিন ঢাকা দিতে ব্যস্ত থাকার সময় বাজ পড়ে। ওখানেই পড়ে যান গনি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হলে তাকে মৃত বলে ঘোষনা করা হয়। উল্লেখ্য লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি গনি। আড়াই মাস কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পয়সা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কাজ শুরু করে কিছু পয়সা জমিয়ে বাড়ি যাবেন এমনটাই বলেছিলেন বিদ্যাসাগরপল্লীর বাসিন্দাদের কাছে।