Homeআন্তর্জাতিকএক মুখে সাহিত্য অন্য মুখে গনিত ! শারীরিক প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে দুই...

এক মুখে সাহিত্য অন্য মুখে গনিত ! শারীরিক প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে দুই নারীর অপরাজেয় কাহিনী

ওয়েব ডেস্ক : পৃথিবীতে রোজ নানান ধরনের ঘটনা ঘটে। সেসবের মধ্যে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা সহজেই আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে।১৯৯০ সালের ৭ মার্চ জার্মানির মিনেসোটায় জন্ম হয় পেটি হেনসেলের দুই জমজ কন্যার। কিন্তু জমজ হলেও তাদের দেহ একসাথে সংযুক্ত।মা পেটির কথায়, “প্রসব বেদনায় তখন কাতরাচ্ছি। জানতাম এখনই আমার ডেলিভারি হবে। আমি মা হব। সত্যিই আমার গর্ভ থেকে সন্তান জন্ম নিলো। তবে একটি নয় দু’টি। এ খবর পেয়ে আমি তো খুব খুশি। মনে মনে ঠিক করলাম আর দুই কন্যার নাম অ্যাবি ও ব্রিটেনি রাখবো। অতঃপর না’র্স জানালেন আমার দুই কন্যা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছে। তাদেরকে পৃথক করা গেলেও একজনের প্রাণ সংশয় রয়েছে।”

একথা শোনার পর মা হিসেবে তার ঠিক কি করা উচিত তা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না পেটি। তিনি ভাবেন, দুই সন্তানকেই তিনি ১০ মাস গর্ভে ধারণ করেছেন। কীভাবে তিনি এক সন্তানকে বাঁচিয়ে আরেকজনকে মেরে ফেলবেন?অবশেষে অনেক ভেবে পেটি তখন চিকিৎসককে জানিয়েছিলেন, তিনি দুই সন্তানকেই বাঁচাতে চান। তারা যেভাবে জন্মেছে সেভাবেই তাদের বড় করে তোলাটাই মা হিসেবে পেটির কর্তব্য।অতঃপর সেদিন থেকেই মা হিসেবে এক নতুন জীবনযুদ্ধ শুরু হয় পেটির। তবে তার এই সিদ্ধান্ত যে সমাজ ভালো ভাবে নিয়েছিল তা কিন্তু নয়। প্রতি পদক্ষেপে তাকে সমাজের নানা মন্দ কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু মেয়েদের কথা ভেবে কখনো কোনো কথা কানেই তোলেননি পেটি হেনসেল। বদলে নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে দুই কন্যাকে মানুষের মতো মানুষ গড়ে তুলেছেন তাদের মা।

তারা দু’জনই সংযুক্ত। তাদের দুইটি মাথা ও ঘাড় আলাদা। দুই পায়ে ভর করে চলেন এই দুই বোন। এমনকি তাদের হাতও দুটি। তবে তারা যে শুধু একে অপরের শরীরের সাথেই সংযুক্ত তা কিন্তু নয় তারা সংযুক্ত একে অপরের মনের সাথেও। ৩০ বছর বয়সী এই দুই বোন এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠও চুকিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজেরাই আজ স্বাবলম্বী।আজ তারা দুজনেই জীবনে সফল। দুজনেই শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। অ্যাবি পড়ান গণিত এবং ব্রিটেনি ইংরেজির শিক্ষিকা। বাইকও চালাতে পারেন তারা বাইকও চালাতে পারেন তারা বলছি, সংযুক্ত দুই কন্যা অ্যাবি ও ব্রিটেনি হেনসেলের কথা।

শুধুমাত্র পড়াশুনা হয় সেই সাথে নানান প্রতিকূলতাকে জয় করে আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো সব কাজই করতে পারে এই দুই বোন। লিখতে, পোশাক পরতে, কি-বোর্ডে লিখতে, পিয়ানো বাজাতে এমনকি হাঁটতেও স’ক্ষম তারা। এমনকি গাড়িও চালাতে পারে তারা।অ্যাবি ও ব্রিটেনির মতো সংযুক্তদের সংখ্যা গোটা পৃথিবীতে অনেক কমই রয়েছেন। ৫০ হাজারের মধ্যে মাত্র এমন একজনই জন্মাতে পারে। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই জন্মানোর পরই মারা যান।

এদের মূলত ডিসেফুলাস টুইনস বলা হয়। তাদের মাথা, ঘাড়, হৃৎপিণ্ড, পিত্তথলি এবং পাকস্থলী আলাদা। তাদের তিনটি ফুসফুস রয়েছে। সেইসঙ্গে দুইটি কিডনি ও একটি করে লিভার, জরায়ু, ডিম্বশয়, যৌনাঙ্গ ও মূত্রাশয় রয়েছে।তবে বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তাদের শারীরিক গঠনের জন্য ঘুমানোর সময় কাত হয়ে শোয়ার কোনো সুযোগ নেই তাদের। এজন্য ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না দুই বোন।শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় তা অ্যানি ও ব্রিটেনী বুঝিয়ে গোটা বিশ্ববাসীকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular