নিজস্ব সংবাদদাতা: আশঙ্কা যেমনটা করা হয়েছিল ঠিক তেমনটাই ঘটতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় লকডাউন শিথিল পর্বে মহারাষ্ট্র আর দিল্লি ফেরৎ শ্রমিকরা জেলায় প্রবেশ করতেই হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। রবিবার গভীর রাতে আসা ফলাফলের নিরিখে সোমবার জেলায় ৫ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে আর ৫ জনই ঘাটাল মহকুমার। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, ‘রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই ৫জনকে বড়মা কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কন্টেনমেন্ট জোন করা হয়েছে এলাকাগুলিকে। প্রশাসন সমস্ত ব্যাপারই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আতঙ্কিত হওয়ার মত কিছু নেই।”
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জেলাবাসীকে আশ্বস্ত করলেও জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসন খুব বেশি আশ্বস্ত হতে পারছেনা কারন ফেরৎ পরিযায়ীদের অধিকাংশই আক্রান্ত হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রশাসনের। কারন প্রথম দিক থেকে শুরু করে আজ অবধি জেলায় যে ৩৭জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে তার মধ্যে ১৪জনই পরিযায়ী এবং মহারাষ্ট্র ও দিল্লি ফেরৎ আর এরা খুব সম্প্রতি ফিরেছেন। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী রবিবার রাতে যে ৫ জনের করোনা ধরা পড়েছে এঁদের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল ২২ এবং ২৩মে।
লকডাউন শুরুর পরই ঘাটাল মহকুমারই দাসপুর থানার নিজামপুর গ্রামে জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত যুবক ফিরেছিলেন মুম্বাই থেকে। সোনার কাজ করতেন তিনি। লকডাউনের আগেই বাড়ি ফিরে গেছিলেন তাতেই তিনি আক্রান্ত! যেন সেটাই ইঙ্গিত দিয়েছিল ভবিষ্যতের। প্রশ্ন উঠেছিল ঘাটাল মহকুমার ঘাটাল, দাসপুর আর চন্দ্রকোনা এই তিন থানার যে ৫০ হাজার মানুষ বাইরে সোনার কাজ করেন এবং যার বেশিরভাগটাই মুম্বাই ও দিল্লিতে তারা ফিরলে কী হবে? উত্তর মিলল রবিবার। ঘাটালের শীতলপুর, দাসপুরের দানিকোলা আর চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই মিলিয়ে যে ৫ জন আক্রান্ত তাঁরা সবাই স্বর্ণশিল্পী এবং আগেই বলা হয়েছে যে দেশের সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত শহর মুম্বাই ও দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দপ্তরের আশঙ্কা এই ফেরৎ দের যাঁদেরই পরীক্ষা হয়েছে তাঁরা সবাই-ই না পজিটিভ হয়ে পড়ে।
সারা জেলায় এখনও অবধি কত পরিযায়ী ফিরেছেন? জানতে চাওয়া হলে পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রায় ৪৬ হাজার। এ হিসাব পুলিশের সামনে দিয়ে ফেরার বা যাঁদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইন করা গেছে তাঁদের। কিন্তু অনেকেই আছে যাঁরা এর বাইরেরও ফিরেছেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা হেসে খেলে ৫০ হাজার ছুঁয়ে যায়। আরও কত ফিরবেন? হোঁচট এখানেই কারন উত্তরটা খুব বেশি জানা নেই। নোটবন্দির সময়ে স্বর্ণশিল্পীদের ফিরতে হয়েছিল। সেই সময় কিছু আন্দোলন সংগঠিত হয় তৃণমূল ও স্বর্ণশিল্পীদের সংগঠনের। তখনই একটি হিসাবে জানা যায় ঘাটাল মহকুমাতেই সংখ্যাটা ৫০ হাজার। তার বাইরেও অন্য থানায় রয়েছেন। স্বর্ণশিল্পী ছাড়াও রয়েছেন জরি শিল্পী, রাজমিস্ত্রি, রঙ মিস্ত্রি, জলের পাইপ প্রতিতস্থাপন কারী আর এঁদের কয়েকগুণ বেশি ঠিকা শ্রমিক।সংখ্যাটা লাখ নাকি দেড় লাখ তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসন বরং উদ্যোগী হয়েছে ঘরে ফেরা প্রতিটি মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করতে আর সে কারনেই প্রায় সমস্ত স্কুল কলেজ সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলিকে আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিযায়ীদের থাকার জন্য প্রশাসন চাওয়া মাত্রই যেন চাবি তুলে দেওয়া হয়। আর করোনা পরীক্ষার সংখ্যা যা কিনা জেলায় বর্তমানে ৬০০টি হত তা প্রায় ৩ গুন বাড়ানো হচ্ছে।