নিজস্ব সংবাদদাতা: যখন চার কড়াতে এক গন্ডা হয় তখন বলতেই হয়ে আবহাওয়া ধারাপাতের সেই ১গন্ডার এক কড়া ফাঁড়া কাটল খড়গপুর আর মেদিনীপুরের, এখনও কাল বৈশাখীর হাতে রইল তিন কড়া। শনিবারের সাঁঝবেলাতেই হওয়া অফিস জানিয়েছিল ১লা জুন অর্থাৎ সোমবার থেকেই পরপর ৪ থেকে ৫দিন ঝড় ও বৃষ্টিতে ভিজবে খড়গপুর মেদিনীপুর সহ দক্ষিনবঙ্গ। আবহাওয়া দপ্তরের সেই পাঁজি একেবারে কড়া ক্রান্তিতে মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে বৃষ্টিতে ভিজল দুই শহর ছাড়াও গ্রামীন খড়গপুর আর মেদিনীপুরেরও বিস্তীর্ণ অংশ। যদিও সোমবারই নয় বরং বলা যেতে পারে সোমবার পড়তে ২ঘন্টা বাকি থাকতেই রবিবার রাত ১০টা থেকেই ঝাঁপিয়ে ছিল কাল বৈশাখী। ওই দিন মেদিনীপুর শহরে ২দফায় মিনিট কুড়ি বৃষ্টি হলেও দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে খড়গপুরে এবং ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত ও ভারি বৃষ্টি যেন তেড়েফুঁড়ে গিলতে চেয়েছে খড়গপুরকে। খড়্গপুরে বৃষ্টি হয়েছে রাত ১১টা থেকে শুরু করে ১২টা ১৫ অবধি।
রাতের বৃষ্টি যদি দুই শহরের আগাম সুদ হিসাবে তীব্র ভ্যাপসা গরমকে কমনীয় করেছিল তো সেই সুদের আসল খড়গপুর মেদিনীপুর দেখল সোমবার দুপর বেলায়। এদিন দুপুর পৌনে একটা থেকে সোয়া একটা ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি হয়েছে মেদিনীপুর শহর ও সন্নিহিত গ্রামীন এলাকায় আর দেড়টা একটা থেকে সোয়া দুটো অবধি তীব্র ঝাপটের বৃষ্টি দেখেছে গ্রামীন ও শহর খড়গপুর। এই বৃষ্টির তেজ ও বাতাসের গতি এতটাই তীব্র ছিল যে ৬নম্বর ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মালবাহী লরি ও চারচাকার প্রাইভেট কার গুলিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে চৌরঙ্গী এলাকায়। ঘন কালো মেঘের আবছা আলো আর বৃষ্টির বাষ্পীয় স্তর ভেদ করতে রীতিমত হলুদ আলোর ফগ কাটার ব্যবহার করতে দেখা যায় বহু গাড়িকে।
সোমবার সকাল থেকেই অবশ্য আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা ছিল দুই শহরের মাথার ওপর। দুপুরে তারই সুযোগ নিয়ে পসরা সাজিয়েই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস ছিলই যে আগামী ৪-৫ দিন খড়গপুর মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই কালবৈশাখীর পূর্বাভাস রয়েছে। সেই সাথে চলবে বৃষ্টি। রীতিমত পঞ্জিকার ধরনেই বলা হয়েছিল, ১জুন (সোমবার)- ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিমি গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।২ জুন (মঙ্গলবার)- ঘন্টায় ৪০-৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বইতে পারে কালবৈশাখী। সেই সাথে চলবে বৃষ্টি। ৩ রা ও ৪ঠা জুনও ঘণ্টায় প্রায় ৩০- ৪০ কিমি বেগে কালবৈশাখীর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম দিনেই কাঁটায় কাঁটায় মিলে গেছে এই পঞ্জিকা। আর বাকি দিনগুলোও এভাবেই চলতে থাকলে ফের জলে ভাসবে দুই শহর।
কারন ব্যখ্যা করতে গিয়ে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আমফানের পর থেকেই শক্তিশালী হয়েছে মৌসুমী বায়ু। এর জেরে বাতাসে বাতাসে বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হয়েছে। ফলে থেকে থেকেই ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তারওপর ইতিমধ্যেই একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা উত্তরপ্রদেশ থেকে নাগাল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর জেরে বিহার ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে এই নিম্ন অক্ষরেখাটি গিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে বাংলায়। অন্যদিকে ইতিমধ্যেই আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। ফলে কালবৈশাখীকেই প্রাক বর্ষার ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য বছর গুলিতে জুন মাসের শুরুতে গরম থাকে। কিন্তু এবছর আমফানের জেরে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় মাঝে মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চলছে কালবৈশাখী। সেই সাথে চলছে বৃষ্টি। তাই তেমন গরম নাও মালুম হতে পারে এই মরশুমে। এমনিতেই রবিবার রাতে ও সোমবার দুপুরের বৃষ্টির পর দু’শহরের তাপমান নেমে গিয়েছে অনেক খানি।