নিজস্ব সংবাদদাতা: এক আসন্ন প্রসবা হস্তিনীর দেহ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে। কী ভাবে ওই হস্তিনীর মৃত্যু হয়েছে তা জানতে পারেনি বনদপ্তর। বনদপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার মৃতদেহটি উদ্ধারের পরেই তার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু তদন্তের ফলাফল আসতে অন্তত ৪৮ ঘন্টা সময় লেগে যাবে তারপরই বোঝা যাবে মৃত্যুর আসল কারন। দলের মধ্যে থাকা ওই হস্তিনী কিভাবে দলছুট হয়ে মারা গেল তা ভাবাচ্ছে বনদপ্তরকে।রবিবার সকালে এই হস্তিনীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ৫০ শালবনী থানা এলাকার ভীমপুর অঞ্চলের কদমাশোলের জঙ্গলে। ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় রেঞ্জের কদমাশোল জঙ্গল আবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী থানার অধীন যা মেদিনীপুর বনবিভাগের পিড়াকাটা রেঞ্জের লাগোয়া। ফলে খবর পেয়ে দুই জেলারই বন আধিকারিকরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে।
গত কয়েকদিন ধরে দলমার এই বুনো হাতির দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকায়। কয়েকদিন আগেই হাতির আক্রমণে পিড়াকাটা রেঞ্জেরই মৃত্যু হয়েছিল মোবাইলে পাবজি খেলায় মত্ত এক কিশোরের। হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে শালবনীর একাধিক গ্রাম, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক জমির ফসল। সেই দলটির মধ্যে যেমন একাধিক হস্তি শাবক ছিল তেমনই ছিল একাধিক গর্ভিনীও তারই একটির হাতিরই মৃতদেহ গ্রামবাসীরা সকালে দেখতে পান কদমাশোল গ্রাম ও জঙ্গল লাগোয়া তিলের চাষ করা একটি ক্ষেতে।
গ্রামবাসীরা দেখতে পেয়েই খবর পাঠান বনদপ্তরে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় লালগড় রেঞ্জের রেঞ্জার শ্রাবণী দে ও পিড়াকাটা রেঞ্জের রেঞ্জার পাপন মোহন্ত সহ একাধিক বন আধিকারিকরা।
পিড়াকাটা রেঞ্জার পাপন মোহন্ত জানিয়েছেন, ” কিভাবে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের ফলাফল এলেই মৃত্যুর কারন পরিস্কার হবে।” তবে মোহন্ত স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, মৃত হস্তিনী পূর্নগর্ভা ছিল। খুবই শীঘ্রই প্রসব করার মত অবস্থায় ছিল হস্তিনীটি। রবিবার দুপুরে ময়নাতদন্তের কাজ শুরু করেন ভেটেনারী সার্জেনদের একটি দল। হাতির পেট চিরতেই বেরিয়ে আসে শাবকটি। সেটি পূর্ন আকার লাভ করেছিল বলেই জানিয়েছেন মোহন্ত যদিও গর্ভেই মৃত্যু হয়েছিল তার। হাতির মৃত্যুর কারনে শাবকের মৃত্যু নাকি শাবকটি কোনও কারনে গর্ভে মারা যাওয়ায় মা যন্ত্রনায় মারা গেছে সবই এখন তদন্ত স্বাপেক্ষ।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে একটি হস্তিনী প্রায় ২ বছর গর্ভে ধারন করার পরই প্রসবকালীন পর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়। গর্ভ লক্ষণ স্পষ্ট হওয়া মাত্রই দলের মধ্যে থাকা দাঁতাল বা পুরুষ হাতিরা এবং পুরো দলটিরই নজরের মধ্যেই থাকে গর্ভিনীরা। তাঁরা যাতে কোনও ভাবেই বিপদের মধ্যে পড়ে তা নজরে রাখে দাঁতালরা। হাতির এই স্বভাবের বাইরে গিয়ে হস্তিনীটি কীভাবে বিচ্ছিন্ন হল নাকি গভীর রাতে গর্ভ যন্ত্রনায় হস্তিনীর মৃত্যুর পরই দলটি তাকে ফেলে গিয়েছে এসবই এখন চর্চার বিষয়। ময়না তদন্তের পরই হস্তিনী ও শাবকটির সৎকার কার্য শুরু হয়েছে।