নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর শহরে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর আসল শনিবার রাতে। মেদিনীপুর শহরের উপান্তে হোসনাবাদ লাগোয়া গ্লোকাল লেভেল টু কোভিড হাসপাতালে গত শুক্রবার ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে শনিবার গভীর রাতে প্রথা মেনেই মৃতদেহ একটি নির্দিষ্ট স্থানে তাঁর সৎকার করেছে প্রশাসন। রবিবার সকালে খড়গপুর পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের দেবলপুর দুর্গামন্দির থেকে শুরু করে মঞ্জেরবাড়ি বা আজাদ ক্লাব অবধি জায়গাকে কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষনা করেছে সরকার।
জানা গেছে খড়গপুরের দেবলপুরের ওই বাসিন্দা বহুদিন ধরেই শ্বাসকষ্ট উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন। ইদানিং শ্বাসের কষ্ট বাড়লেও চিকিৎসা করাতে গেলে পাছে করোনা বলে অন্য কোথাও নিয়ে চলে যায় এই ভয়ে ইদানিং চিকিৎসা করাতেও যাচ্ছিলনা। ওই ব্যক্তির জামাই জানিয়েছেন, “২৫তারিখ হঠাৎই তাঁর সমস্যা শুরু হয় কিন্তু ঈদের দিন বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ২৭ তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় এবং করোনা সন্দেহ করে ওই দিনই তাঁকে গ্লোকাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় বিকাল বেলায়।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা মহম্মদ আরিফ জানিয়েছেন, ” আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ওঁকে বলছিলাম হাসপাতালে যেতে কিন্তু করোনা চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার ভয়েই উনি যাচ্ছিলেন না। অথচ কী আশ্চর্য সেই করোনাতেই মারা গেলেন। আগেই চিকিৎসা শুরু হলে হয়ত এই মৃত্যু এড়ানো যেত।”
মৃতের জামাই জানায়, “২৭মে গ্লোকাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেওয়ার পর প্রথম দিকে চিকিৎসায় ভাল সাড়া দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এমনকি ২৯ তারিখ শুক্রবারই ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। কিন্তু ওই দিন দুপুরেই তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়।”
আরিফ জানিয়েছেন, ” এরপর পর পর ২দিন বাড়ির লোকেরা মৃতদেহ আনতে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ দেয়নি এমনকি দেহ দেখতেও দেওয়া হয়নি পরিবারকে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয় ওই ব্যক্তির ফের করোনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। ফলাফল না আসা অবধি দেহ দেওয়া যাবেনা। শনিবার রাতে ওই দেহ সমাহিত করা হয়েছে বলেই খবর পেয়েছি।”
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গেছে শেষ অবধি শনিবার ওই ব্যক্তির কোভিড পজিটিভ ফল আসে। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। বাড়ির একজনের উপস্থিতিতে মেদিনীপুর শহরের একটি জায়গায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়। এখন কী ভাবে ওই ব্যক্তি করোনা সংক্রমন এলেন এটা নিয়েই মাথা ব্যথা প্রশাসনের। গোলবাজারে টিনের ট্র্যাংক বানানোর দোকানের মালিক এই ব্যক্তি কোনও দিনও বাইরে কোথাও যাননি বলেই জানিয়েছেন পরিবারের লোকেরা। পরিবারের ১৩ জন সদস্যকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে গেছে প্রশাসন।
শুধু খড়গপুর শহরই নয় জেলায় কোনও করোনা আক্রান্তের এটাই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে বেলদার এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভুবনেশ্বরে মারা গেলেও মৃত্যুর পূর্বে তাঁর ফলাফল কোভিড নেগেটিভ ছিল। অন্যদিকে চন্দ্রকোনার এক ব্যক্তি যিনি কলকাতায় বাস করতেন তিনি সেখানে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যান। করোনা আক্রান্ত অবস্থায় তাই জেলায় এটাই প্রথম মৃত্যু। যদিও স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে ব্যক্তির করোনা থাকলেও তিনি প্রধানত শ্বাসকষ্ট জনিত কারনেই মারা গেছে। অর্থাৎ এই মৃত্যু কো-মর্বিডিটি হিসাবেই গৃহীত হবে।. ছবি সৌজন্য: খড়গপুর এসডিপিও ফেসবুক পেজ