তিতলী সেনগুপ্ত : রেল সফরেও মৃত্যু অব্যাহত পরিযায়ী শ্রমিকদের। শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর ট্রেন শ্রমিক স্পেশালে সফররত অবস্থায় এখনও অবধি ৮০জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এমনটাই খবর মিলেছে সম্প্রতি। শ্রমিক স্পেশালের দুরাবস্থা নিয়ে সরব হয়েছিল নানা মহল। রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়জল দিচ্ছেনা রেল। রেলের বহু স্টেশনে এই নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছিল শ্রমিকদের। সেই সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে রেলের পক্ষ থেকে সম্প্রতি আইআরটিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সফররত ব্যক্তিদের তিন বেলা খাবার ও দৈনিক ৬ লিটার পানীয় জল দিতে হবে। রেলের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকার মাঝেই চলে এল শ্রমিকদের মৃত্যুর এই তথ্যটি।
দেশজুড়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে পঞ্চমদফার লকডাউন। যা সোমবার বা ১লা জুন থেকে লাগু হচ্ছে। অন্যদিকে, ভিন রাজ্যে আটকে পড়া লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরছেন নিজ নিজ বাড়িতে। কেউ কেউ মাথায় বোঝা নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন প্রিয়জনদের কাছে ফেরার উদ্দ্যেশ্যে। কেউ কেউ আবার উঠে পড়ছেন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনে। উদ্দেশ্য একটাই যেভাবেই হোক বাড়ি ফিরতেই হবে। কিন্তু এতেও ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’। যত দিন যাচ্ছে ক্রমশ বেড়েই চলেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা। কখনো মৃত্যু হচ্ছে ট্রেনের ধাক্কায় কখনো আবার ট্রেনের মধ্যেই।
‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন চালু করার আগে কেন্দ্রের তরফে বেশ কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিল। সে সকল নিয়ম নীতি মেনেই চলছিল ট্রেন। এরই মধ্যে কোনো শ্রমিক অসুস্থ হলে তাদের এই ট্রেনে না ওঠার পরামর্শ দেয় ভারতীয় রেল। কিন্তু কেন হঠাৎ এমন পরামর্শ? এবিষয়ে রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বিগত কয়েকদিনে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনে বেশ কিছু মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রেলের তরফে তাদের এই পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে আদপে ঠিক কতজন শ্রমিক মারা গিয়েছেন কিংবা মৃত সকলেই করনা পজিটিভ ছিল কিনা সেই সম্পর্কে কোনো কিছুই জানায়নি রেল কর্তৃপক্ষ। ১ মে থেকে এই অবধি মোট ৩৮৪০টি ট্রেন চলেছে। তাতে নিজের রাজ্যে ফিরেছে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ। সর্বভারতীয় এক ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত ৯ মে থেকে প্রায় প্রতিদিনই ‘শ্রমিক স্পেশাল’এর বিভিন্ন কামরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শ্রমিকদের দেহ। রেলওয়ে পুলিশ ফোর্সের রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ট্রেনের কামরায় মারা গিয়েছেন প্রায় ৮০ জন পরিযায়ী। এরমধ্যেই গোটা দেশকে চমকে দিয়ে বিহারের মজফ্ফরপুর স্টেশনে মৃত এক তরুনীর শিশুপুত্রকে দেখা গিয়েছে মাকে ঘুমন্ত ভেবে তাঁর ঘুম ভাঙানোর জন্য ছেলের আকুতি।
যদিও রেলের তথ্য অনুযায়ী এপর্যন্ত যে ক’জন পরিযায়ীর মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। তবে মৃতদের মধ্যে সকলেই যে শ্রমিক তাও নয়। বেশ কয়েকজন আগে থেকেই অসুস্থ থাকায় তারা চিকিৎসার জন্য বড় শহরে গিয়েছিলেন কিন্তু লকডাউনে গন্তব্যে ফিরতে পারেননি। এতদিন পর ট্রেন চালু হওয়ায় তারা সকলেই ফিরছিলেন যে যার নিজের গন্তব্যে।
তবে রেলমন্ত্রকের তরফে রেলওয়ে পুলিশ ফোর্সের দেওয়া তথ্য সংখ্যা ফের বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।