নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনে সাফাইকর্মীদের একটা বড় অংশকেই কাজে যোগ দিতে মানা করেছে আইআইটি কর্তৃপক্ষ। নেহাৎই জরুরি পরিষেবা ছাড়া কর্মী নেই বললেই চলে কিন্তু আইআইটির বিস্তৃত আবাসন প্রাঙ্গন ও পঠনপাঠনের মূল প্রাঙ্গনটির এত বড় এলাকা পয় পরিস্কার রাখাটাও অত্যন্ত জরুরি। গত প্রায় ১দশক ধরে আইআইটির পথঘাট নিয়ম করে দুবেলা ঝাঁট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। গাছগাছালি বেষ্টিত আইআইটি খড়গপুরের ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলি তাই ঝাঁ চকচকেও বটে। এই রাস্তাঘাট পরিস্কার রাখা কিংবা আগাছা মুক্ত পরিবেশ রাখতে ঠিকাদারদের অধীনে প্রায় ৩৬০জন মানুষ নিয়োজিত থাকত। লকডাউনের জন্য এঁদের নিয়মিত কাজ করানো সম্ভব হচ্ছেনা। প্রথম দিকে একেবারেই বন্ধ রাখলেও হালে সপ্তাহে দু’তিনদিন করে কাজ করানো হচ্ছে। তাতেও একটি বিস্তীর্ন এলাকা থেকে যাচ্ছে পরিস্কার করার ক্ষমতার বাইরে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় এবার রোবট বা যন্ত্রচালিত ঝাঁটার ব্যবস্থা করে ফেললেন আইআইটির একদল গবেষক। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বিঘা পরিমান রাস্তা একাই ঝাঁট দিতে সক্ষম হয়ে পরীক্ষায় সসম্মানে উর্ত্তীর্ণ হয়ে গেছে এই যান্ত্রিক সম্মার্জনী।
হ্যাঁ, এই যান্ত্রিক ঝাঁটা বা ঝাড়ু বস্তুটির এরকমই সংস্কৃত নাম রেখেছেন গবেষক দলটি। দেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম এই প্রযুক্তি ও কারিগরী প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েকবছর ধরেই দেবনাগরী প্রেমে আপ্লুত। সেই দেবনাগরী আর প্রযুক্তির সঙ্কেত মিলিয়ে বস্তুটির নাম দেওয়া হয়েছে ,” সম্মার্জক এম.বি ৪.২ ” আইআইটি খড়গপুরের নির্দেশক অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারী চাইছেন লকডাউন পর্বে তো বটেই এমনকি লকডাউন প্রত্যাহার করার পরেও সম্মার্জককে পাকাপাকি বহাল করা হোক ক্যাম্পাস এলাকায় ঝাড়ু দেওয়ার জন্য। তাঁর বক্তব্য, ” খুব গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কিছু ক্ষেত্র ছাড়া মার্চ মাস থেকেই ক্যাম্পাসের ভেতরে সাফাইকর্মীদের কাজে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। পরে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত ভাবে তাঁদের পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসের তুলনায় সেই সংখ্যা যথেষ্ট নয়। ক্যাম্পসের যে অংশটি সাফাইকর্মীদের কাজের বাইরে থেকে যাচ্ছে তা পূরন করবে এই স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ঝাঁটা। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলি পরিস্কারের করার কাজে একে ব্যবহার করা হবে।”
অধ্যাপক মিহির ষড়ঙ্গী, যিনি এই গবেষক দলটির প্রধান তিনি অবশ্য আরও বড় আকারে বিষয়টি ভাবছেন। তিনি বলেন, “এই যান্ত্রিক ঝাঁটা তৈরি করা হয়েছে ভারতীয় পথঘাটের উপযোগী করে। শুধুই শহর নয় শহরতলী বা আধা শহরগুলির রাস্তাতেও যাতে এই যন্ত্র চলতে পারে সেরকম ভাবেই এটি নমনীয়। প্রয়োজন মত এর ব্রাশ বা ঝাঁটার কাঠিগুলি উপর নীচে বা পাশাপাশি কমানো বাড়ানো যাবে। বর্তমানে এটি ব্যাটারি চালিত হলেও শীঘ্রই এর সৌরচালিত সংস্করন বের করা হবে। এরফলে এটির ব্যয়ভার অনেকটাই কমে যাবে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালতে একে ব্যবহার করাই যেতে পারে।”
অধ্যাপক ষড়ঙ্গীর বক্তব্য, যে সময়ে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল ডিস্টেন্স মানার জন্য সরকারি বা বেসরকারি দপ্তর গুলিতে যথা সম্ভব কম কর্মী নিয়ে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে সেই সময়ে এই যন্ত্রচালিত ঝাঁটা অনেকটাই কার্যকর। বড় বড় কোম্পানিগুলিকে যেখানে ৩০%মানুষ নিয়ে কাজ করতে বলা হচ্ছে সেখানে এরচেয়ে ভাল বিকল্প কি হতে পারে।
অধ্যাপক তেওয়ারী মনে করছেন বর্তমানে তো বটেই আগামীদিনেও অটোমেশন ছাড়া জাতির গতি নেই।তাই যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখানে অটোমেশন গ্রহন করাই দরকার এবং সেটাই জাতির পক্ষে মঙ্গল। কিন্তু এরজন্য কী কর্মসঙ্কোচন ঘটবেনা? আইআইটি খড়গপুরের নির্দেশকের উত্তর,” কম্পিউটার জাতির জন্য যে বিপুল সম্ভবনা ও কাজের সুযোগ এনে দিয়েছে তা প্রমান করে যে অটোমেশন বরং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগই করে দেয়। অটোমেশন বা স্বয়ং প্রযুক্তির ব্যবহার তেমনি অজস্র অনুসারি শিল্পের সম্ভবনা ও কর্মসংস্থাননের সুযোগ করে দেবে।”