নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বামী স্ত্রীর মধ্যে চূড়ান্ত মনোমালিন্য। দেড় বছর ধরে নিজের ঘর ছেড়ে বাপের বাড়িতেই স্ত্রী। মামলা গড়িয়েছে আদালত অবধি তারই মাঝে মেয়েকে দেখতে চাওয়ার অধিকার নিয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্বশুরবাড়ির সামনে ধর্নায় বসলেন যুবক। লকডাউনের বাজারে তিনঘন্টার এই ধর্নাকে ঘিরেই সরগরম হয়ে রইল খড়গপুর শহরের ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচার ঘোষ পাড়া। বুধবার লকডাউনের বাজারে স্থানীয় লোকেদের পাশাপাশি পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা মিলিয়ে তোলপাড় কান্ড। অবশেষে অবশ্য মেয়ের সঙ্গে দেখা করেই ফিরেছেন বাবা।
বুধবার সকাল ৯ টা নাগাদ ঘোষ পাড়া বলে পরিচিত শ্বশুর গনেশ দাসের বাড়ির সামনে নিজের মোটরবাইকে প্ল্যাকার্ড বেঁধে ধর্না শুরু করেন তালবাগিচারই যুবক পেশায় আঁকার শিক্ষক স্বরূপ ভৌমিক। স্বরূপের দাবি, গত কয়েকমাস ধরেই তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছেনা। স্বরূপ জানায়, সাত বছরের বিবাহিত জীবন তাঁদের। মেয়ের বয়স পাঁচ পেরিয়েছে। স্থানীয় একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী। পারিবারিক অশান্তির জেরে ২০১৯ জানুয়ারিতে স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে আসে মেয়েকে নিয়ে আর ফেরেনি। ওই বছর অক্টোবর মাসে স্বরূপ স্থানীয় থানায় যায় স্ত্রীকে তাঁর বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে। পুলিশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসে কিন্তু স্ত্রী ফেরেনি। কিছুদিন পরেই স্বরূপ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন সহ কয়েকটি ধারায় মামলা করেন স্বরূপের স্ত্রী।জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা কিন্তু মামলাটি রুজু করা হয় স্ত্রী বাপের বাড়িতে থাকা কালীনই সম্ভবত সেই আ্যলিবাই থেকেই হাইকোর্ট থেকে জামিন পান স্বরূপ।
স্বরূপের দাবি, স্ত্রীর বাপের বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেও সে স্ত্রীর বাপের বাড়িতে গিয়েই নিয়মিত মেয়ের কাছে গেছে, তাকে পড়িয়ে আসত কয়েকঘন্টা। স্বরূপ জানায়, যেহেতু আমার স্ত্রী একটি দোকানে কাজ করে তাই আমার মেয়েকে ঘন্টার পর ঘন্টা একাই থাকতে হত। তাই মেয়েকে সঙ্গ দিতে, তাকে গাইড করতেই আমি যেতাম। তার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হওয়ায় আত্মগোপন করতে হলে স্বরূপ মাঝখানে আর যেতে পারেনি। জামিন পাওয়ার পরও সে কিছুদিন যায়নি কারন তাঁর আইনজীবীর পরামর্শ ছিল এখুনি কোনও অজুহাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফের মামলা হলে বিপদে পড়বে সে। কয়েক মাস আগে স্বরূপ ফের তার শাশুড়িকে ফোনে ম্যাসেজ করে জানায় যে সে তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চায়। স্বরূপ জানায় যেহেতু আমার স্ত্রী আমাকে মোবাইলে ব্লক করে রেখেছে তাই শাশুড়িকেই ম্যাসেজ করি এবং দিনক্ষন জানিয়ে দেই। এরপর স্বরূপ অবশ্য আর বাড়িতে ঢুকতনা, বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে অথবা রাস্তায় মেয়ের সঙ্গে বাড়িয়ে বেড়িয়ে গল্প করত।
স্বরূপ প্রতিবারই যাওয়ার আগেই দিনক্ষন জানিয়ে যেত। স্বরূপের দাবি দেড় মাস আগে এরকমই ভাবে ম্যাসেজ পাঠানোর পরেও সেদিন বৃষ্টির জন্য যেতে পারিনি। তারপর থেকেই আর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছেনা আমাকে। স্বরূপের দাবি বারবার দেখা করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে একদিন রাগের মাথায় বলেছিলাম যে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে না দিলে লঙ্কাকান্ড বাধাবো। এই কথার ওপর ভিত্তি করেই ফের ওরা থানায় গিয়ে ফের অভিযোগ করে যে আমি নাকি ওঁদের হুমকি দিয়েছি। এরপর পুলিশ আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আমি আর যেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে না যাই। এরপরই বাধ্য হয়ে আজকে আমাকে ধর্নায় বসতে হয়েছে। আমি একজন বাবা হিসাবে মেয়েকে দেখার অধিকারটুকু পেতে চাই।
স্বরূপ ধর্নায় বসার পরেই আশেপাশের লোক জুটে যায়। সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, ক্লাবের ছেলেরা ভিড় করতে শুরু করে। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশও। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ স্বরূপের পক্ষ নেয়। যদিও স্বরূপের স্ত্রী নুপুরের দাবি তাঁর বাপের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসার নাম করে মিথ্যা সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। নুপুর আরও দাবি করেন, নিয়মিত হুমকির পরেই তাঁরা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দিয়েছেন স্বরূপকে। এরপরই প্রতিবেশীরা ঠিক করেন দুপক্ষকে নিয়ে বসা হবে। যদিও দিনক্ষন এখনও ঠিক হয়নি। সব শেষে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় স্বরূপকে। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে বাড়ি ফিরে যান স্বরূপ। স্বরূপ এদিন এও বলেন যে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসুক তাঁর স্ত্রী।