নিজস্ব সংবাদদাতা: অদ্ভুত এক নেশা ধরানো খেলা পাবজি! খাওয়া দাওয়া, পড়াশুনা, কাজকর্ম মাথায় উঠে বসে এই মোবাইল গেমে। আর নেট দুনিয়ার সুবাদে খেলার সঙ্গী পেয়ে গেলে কথা নেই। যে যার জায়গায় বসেই চলে একসাথে খেলা। যৌথভাবে শত্রুপক্ষ ধ্বংস। শত্রু আসে পেছন থেকেও। যার পেছনে আসে সে দেখতে পায়না দেখে অন্য মোবাইলে যুদ্ধে ব্যস্ত সঙ্গী। সে তখন কানে গোঁজা হেডফোনের মাধ্যমে সতর্ক করে দেয় অপর প্রান্তের সঙ্গীকে।
তেমন করেই অন্য কোথাও থাকা সঙ্গীকে সতর্ক করছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর আমজোড় গ্রামের বাসিন্দা ১৮বছরের রথীন মান্না কিন্তু তার পেছনেই যে ঘাতক এগিয়ে আসছে টের পায়নি সে। টের পায়নি অন্য কোথাও বসে খেলতে থাকা অপর প্রান্তের সঙ্গীও। কারন মোবাইলে তো আর বাস্তবের ঘাতককে দেখা যায়না। তাই গেমে নয় বাস্তবেই প্রান হারালো রথীন। জঙ্গল মহলের যম হাতি শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারল তাকে।
মঙ্গলবার বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার মুখে এমনই মর্মান্তিক ঘটনার স্বাক্ষী রইল পিড়াকাটা রেঞ্জের আমজোড় গ্রামের বাসিন্দারা। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, পিড়াকাটা বনাঞ্চলের অন্তর্গত আমজোড়ের জঙ্গলে কয়েকদিন ধরেই হাতি আস্তানা গেড়েছিল। সন্ধ্যে হলেই হাতির পাল গ্রামের মাঠে বেরিয়ে পড়ছে খাদ্যের সন্ধানে। মঙ্গলবার আহত ওই যুবক জঙ্গলে হাতির উপস্থিতি জানা সত্ত্বেও জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের এক রাস্তার ধারে বসে মোবাইলে পাবজি গেম খেলছিল।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য পাবজি গেমে এতোটাই মশগুল হয়ে পড়েছিল যে বিকেল ছাড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তার কোনো হুঁশ ছিল না। ঠিক তখনই জঙ্গল থেকে একটি হাতি খাদ্যের সন্ধানে গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। এবং মোবাইলে গেমে মত্ত থাকা রথীন কে সামনে পড়ে যায়। হাতিটি তাকে শুঁড়ে প্যাচিয়ে ছুঁড়ে মারা । তার চিৎকারে স্থানীয়রা গিয়ে হাতিকে তাড়িয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনায় রীতিমত খেদ ব্যক্ত করেছেন মেদিনীপুর ফরেস্ট ডিভিশনের কর্তারা। আক্ষেপ করে তারা জানিয়েছেন বনাঞ্চলে হাতির উপস্থিতি সম্পর্কে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। মোবাইল বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি সতর্ক করছেন স্থানীয় বন রক্ষা কমিটি গুলিও। এই গ্রামকেও সতর্ক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল বিকালের আগেই গ্রামে ঢুকে যেতে এবং সন্ধ্যার পর থেকে ঘরে থাকত। বিশেষ করে জঙ্গলের ধারে পাশে যেতে বারন করা হয় হাতির উপস্থিতি থাকলে।তারপরও এই ঘটনা ঘটলে আর কিছুই করার থাকেনা।