Homeএখন খবরঈদের চাঁদ ওঠেনি দাসপুরের গ্রামে! মুম্বাই থেকে পায়ে হাঁটা শুরু করেও লাশ...

ঈদের চাঁদ ওঠেনি দাসপুরের গ্রামে! মুম্বাই থেকে পায়ে হাঁটা শুরু করেও লাশ হয়েও ছেলেদের কাছে ফিরতে পারলনা রাজু

নিজস্ব সংবাদদাতা: ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর তিন সন্তান । সবাই নির্ভর ছিল ৩০ বছরের এই যুবকেরই ওপরে। মুম্বাই থেকে আরও ৩০০কিলোমিটার দূরে একটি জরি কারখানায় কাজ করত সেক রাজু আলি। ফিরেছিল জানুয়ারিতে। সংসার খরচে টাকা শেষ হয়ে আসছিল এদিকে সামনেই ঈদ তাই মাস দুয়েক আগে মুম্বাই চলে গিয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানা এলাকার চক প্রাসাদ গ্রামের যুবক সেখ রাজু আলি ধার দেনা করে হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল মুম্বাই। ভেবেছিল কাজ করে ফের ফিরবে ঈদের আগে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, মুম্বাইয়ে যাওয়ার চারদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন ফলে যে কারখানায় কাজ করার কথা ছিল সেখানে যুক্ত হতে পারেনি। রাজুর পরিবার জানিয়েছে, প্রায় এক মাস ওই অবস্থায় কাটানোর পর টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় মুম্বাই থেকে হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা হয় রাজু। রেললাইন বরাবর হেঁটেই ফিরছিল সে। এরপর গত ২০তারিখ পরিবার মহারাষ্ট্র পুলিশ মারফৎ খবর পায় মহারাষ্ট্রর ভূসওয়াল রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই ২১তারিখই মারা যায় রাজু।

রাজুর বাবা সেখ নুরুল হক জানিয়েছেন, অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, বাড়ির সংগে যোগাযোগের একমাত্র সম্বল মোবাইলটাও বিক্রি করে দিতে হয় রাজুকে। ফলে মুম্বাই ছেড়ে আসার আগে রাজুর সঙ্গে তাঁদের এক মাস আগে কথা হয়েছিল। তখনই সে জানায়, “সব পয়সা শেষ। খেতে পাচ্ছিনা, হেঁটেই বাড়ি ফিরছি। বাচ্চা গুলোকে কটা দিন আগলে রেখো। বড় নামাজের জামা কাপড় কিনে দিও ওদের।”

এরপর তারা রাজুর খবর পায় এই ঘটনার ১৫দিন আগে। জলগাঁও জেলার একটি স্থানের কিছু মানুষ রাজুর বাড়িতে ফোন করে জানায় যে তারা সেখ রাজু বলে একটি ছেলেকে উদ্ধার করেছে। খেতে না পেয়ে ছেলেটি অবসন্ন হয়ে পড়েছে কিন্তু বাড়ি ফিরতে মরিয়া সে। রাজুর বাড়ির লোকেরা ওই মানুষদের জানায় রাজুকে কিছু খেতে দিতে। সুস্থ হয়ে উঠলে যেন কোনও গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। পরের দিনই ফের ওই নম্বরে ফোন করে বাড়ির লোকেরা রাজুর খবর জানতে চাইলে জলগাঁওয়ের সেই স্থানীয় লোকেরা জানান, আটকে রাখা যায়নি রাজুকে।

সে জানিয়েছিল তাঁকে বাড়ি ফিরতেই হবে। রাতেই সবার অজান্তে ফের বেরিয়ে পড়ে সে। এরপরই ভূসওয়াল পুলিশের ফোন এবং রাজুর মৃত্যু।
২১ তারিখ রাজুর মৃত্যু হলেও খবর এসেছে আরও দুদিন পরে। রাজুর আধারকার্ড পেলেও প্রথমে কোনও ফোন নম্বর পায়নি পুলিশ। পরে একটি ব্যাগ থেকে চিরকুটে বাংলায় লেখা ভাইয়ের ফোন নম্বর পেয়ে পুলিশ জানায়। করোনা ভয়ে ততদিনে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২১তারিখ বাংলায় আমফান থাকায় রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি মহারাষ্ট্র পুলিশ।

রাজুর স্ত্রী হাসিনা বিবি জানিয়েছেন, “শেষের দিকে খেতে পাচ্ছিলনা মানুষটা। তবুও বাচ্চাদের জন্য ঘরে ফেরার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিল। বলে ছিল বড় নামাজে (ঈদ) ওদের কিছু ধার করে হলেও কিনে দিও। আমি ফিরে গিয়ে শোধ করে দেব। কিন্তু ও নিজে ফিরবে কি ওর লাশটাও ফেরাতে পারিনি আমরা।”
সোমবার ঈদের চাঁদ উঠেছে সারা দুনিয়ায় শুধু চাঁদ ওঠেনি দাসপুরের চক প্রসাদ গ্রামের রাজুর উঠোনেই।রাজুর সেখ তিন ছেলে ৯ বছরের মিরাজুল, ৬বছরের মিনজারুল আর ৪ বছরের হামিদল্লাকে নিয়ে আছাড়ি পাছাড়ি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হাসিনা। মানুষটা যে একসাথে সবাইকে নিয়ে চাঁদ দেখবে বলেছিল….।

RELATED ARTICLES

Most Popular