হাত

    ✒️  অনীশ ঘোষ                                       দ্বিতীয় হুগলি সেতু ধরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে ঢলেছে গাড়িটা। ড্রাইড করতে করতেই অরণ্য টের পেল, গাছের পাতায় দোল দেওয়া একটা ফুরফুরে বাতাস বইছে বাইরে। এসিটা বন্ধ করে সামনের দুদিকের উইন্ডো গ্লাস নামিয়ে দিল সে। প্রকৃতির হাওয়ায় অনেক বেশি আরাম। পশ্চিমের কালচে নীল আকাশটাতেও আজ সিঁদুরের গোলা রঙ মাখানো। বৃষ্টির চান্স আছে,হাওয়া অফিসের আগাম বার্তাও তেমনটাই।
অরণ্যকে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে রামরাজাতলা, এর মধ্যে তিন তিনবার মন্দিরার তাড়া এসেছে ফোনে। প্রথম ফোনটার সময় সে অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিল, বোসদাকে ম্যানেজ করেই বেরোতে হয়েছে। তারপর সেক্টর ফাইভ থেকে এতখানি উজিয়ে আসা চাট্টিখানি কথা নয়। তাও বেরোনোর পরেও দুবার ফোন এসে গেছে মন্দিরার, ‘তুমি কতদূর? মাকে নিয়ে যে কী করি! কুইক প্লিজ।’ তার গলায় একরাশ উদ্বেগ, আকুলতাও। আসলে আজকাল মন্দিরা তাকে বড্ড ভরসা করে প্রায় সব বিষয়ে। বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে যত, ততই বেড়েছে এই নির্ভরতা। ‘এই তো আর বড়জোর মিনিট কুড়ি। একটু ধৈর্য ধরো মন্দি। নো টেনসন, আমি পৌঁছে যাচ্ছি।’
মাসিমাকে নিয়ে ইদানিং খানিকটা বিব্রতও মন্দিরা। বছর খানেক আগে মেসোমশাই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে চলে যাওয়ার পর থেকেই মাসিমাও একা হয়ে পড়েছেন। সকালে ঠিকে কাজের দিদি আর একটু বেলার দিকে রান্নার মাসি তাদের কাজকর্ম সেরে চলে যাওয়ার পর থেকে গোটা বাড়িটাই তো সারাদিন ফাঁকা, স্কুল সেরে একটু বাজারটাজার, মুদিখানা হয়ে মন্দিরার বাড়ি না ফিরতে সন্ধে গড়িয়ে যায়। মন্দিরার পাশাপাশি মাসিমারও বড় ভরসা এখন অরণ্যই। ছেলের মতোই ভাবেন অরণ্যকে। ভাগ্যিস আজ মন্দিরাদের স্কুলে ফাউন্ডেশন ডে-র ছুটি ছিল, না হলে কী যে হত! খাট থেকে নামতে গিয়ে আচমকা পড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন কখন থেকে। ওকে সামলাতে মন্দিরা হিমশিম। ওদের বাড়ির সামনে গাড়িটা পার্ক করে কলিং বেল টিপতে এক মিনিটের মধ্যেই দরজা খুলে হাউমাউ করে উঠল মন্দিরা, ‘মনে হচ্ছে ডান পাটা ফ্রাকচার, ফুলে ঢোল হয়ে গেছে! পেন কিলার দিয়েও ব্যথা কমছে না! কী যে হবে!’ আশ্বস্ত করে অরণ্য বলে, ‘অত ভাবছো কেন, আমি তো এসে গেছি। কাছেপিঠে কোনো একটা নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হবে। আগে তো দেখি।’ বলে সে মন্দিরার বাঁ কাঁধটা হালকা করেচাপড়ে দেয়। ‘আমার হবু শাশুড়ি মায়ের দেখভাল তো আমাকেই করতে হবে, কী?,’ জবাবে মন্দিরা একগাল হাসি ছড়িয়ে বলে, ‘হ্যা, মায়ের আদরের জামাই বলে কথা!’ অরণ্য তার গালটা টিপে দিয়ে মুচকি হেসে বলে, ‘উঁহু, জামাই নয়, বলো ছেলে।’ মন্দিরা তার দু’হাতের মুঠোয় ভরসার হাতটা ভরে নেয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular