নিজস্ব সংবাদদাতা: “আমাকে রাজনৈতিক ঊর্ধ্বে উঠে; যে কোনও পরিস্থিতি তে পাশে পাবেন।” এমনটাই চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি। কিন্তু কথায় কথায় ‘রাজনীতি করবেননা’বলা মুখ্যমন্ত্রী সে চিঠির উত্তর দেওয়ার রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাননি। অগত্যা নিজের মত করেই মানুষের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ২০১১ আর ২০১৬ তে হিরোইন দেবশ্রী রায়ের কাছে হেরে যাওয়া হেরো নেতা এলাকার কান্তি দা।
বয়স ৭৬ কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে মনুষ্যত্ব লাগে সেই চামড়ায় একটুও ভাঁজ পড়েনি। আয়লা, বুলবুল, ফণীর মত আমফানেও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিজের সাধ্যমত ত্রান নিয়ে। রায়দিঘির প্রত্যন্ত গোরাগাছি এলাকা থেকে সুন্দরবনের অজানা প্রান্তিক মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরে খোঁজখবর নিচ্ছেন রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক কান্তি গাঙ্গুলি।প্রতিবারের মত, সুন্দরবন এলাকার মানুষের পাশে থেকে ফের চাল-ডাল এবং ত্রাণের অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে; হাজির হয়ে গেছেন সবার প্রিয় কান্তিদা।
একটি ছোট লরিতে ত্রাণের জন্য দু-হাজার ত্রিপল; একটা নৌকা, ১০০ কুইন্টাল চাল; তিন লক্ষ টাকার ওষুধের বন্দোবস্ত করেছেন তিনি। মানুষদের সেবায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে সবকিছু তদারকি করছেন। শুধু তদারকি নয়, ‘আমফান’ আক্রান্ত মানুষদের সাময়িক পুনর্বাসনের জন্য; প্রতিবারের মত এবারেও নিজের বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছেন। আগের ঝড়ের অভিজ্ঞতা থেকেই কান্তি জানেন, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে এ লড়াইটা চালানো যাবে না। লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন আয়লার সময়। সেই লড়াই দেখেছে গোটা রাজ্য। এবারও চাল, ডাল, আলু, ত্রিপল যতটা সম্ভব দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
কান্তি গাঙ্গুলির স্ত্রীর নামে এলাকায় ‘জবাবিরাজ জ্ঞানায়ন পাঠশালা’-তে; মানুষের থাকার সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন; ঠাঁই নিয়েছেন ওখানে। রাখা হয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প। রাতের মেনু ডাল, ভাত, সবজি। স্কুলেই রয়েছেন তিনি নিজেও। কান্তিবাবুর বক্তব্য; “আমি পাকা বাড়িতে থাকব; আর ওরা কোথায় যাবে”। বিনামূল্যে ওষুধ, ডাক্তার সব নিয়ে রাতে পাহারায় থাকবেন কান্তি।
বাম আমলে সুন্দরবন মন্ত্রী হিসেবে ২০০৯ সালে আয়লার সময়েও গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধার, ত্রাণের কাজ করেছিলেন। তার ২বছর পরেই ২০১১ সাল ভোটে হেরেছেন। যাঁকে জিতিয়েছিলেন সেই হিরোইন বোধহয় সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে ত্রাণের ময়দানে নামতে ভয় পেয়েছেন।
না, তারপরও ঝড় এসেছে ভয়ঙ্কর, বুলবুল, ফণী। হিরোইন বিধায়কের দেখা মেলেনি কোনও বিপর্যয়ের সময়। তবে এসব কিছু ভাবতে চাননা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “রাজনীতি মানেই কি ভোটে জেতা? আমি এব্যাপারে বিশ্বাসী নই৷ রাজনীতি মানে দেশপ্রেম৷ ক্ষমতায় থাকলাম কি থাকলাম না সেটা বিষয় নয়৷ ক্ষমতা থাকলে অনেক কাজ করা যায়৷ লোকের পাশে একটু থাকা, ভরসা জোগাতে কি অনেক টাকার দরকার হয়?”