নিজস্ব সংবাদদাতা: সকাল ৯ টায় দিঘা থেকে ২২৫ কিলোমিটারের মধ্যে আমফান। খড়গপুর শহর থেকে ৩২৫ এবং মেদিনীপুর শহর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থান করছে। খড়গপুরের দক্ষিনে দুটি বৃহৎ জনপদ বেলদা এবং দাঁতন। বেলা ২টা নাগাদ যখন আমফানের চোখ দিঘা থেকে প্রায় শূন্য কিলোমিটারে অবস্থান করবে তখন বেলদা ও দাঁতনের দূরত্ব আমফানের থেকে ৪৫-৫০কিলোমিটার দক্ষিনে। ফলে ওই সময়ের আগে পিছু ১ঘন্টা দুটি জনপদের জন্যই খুবই মারাত্মক হয়ে দাঁড়াবে। আর সেই প্রভাব লক্ষ করা যাবে খড়গপুর ও মেদিনীপুরেও কারন আমফানের চোখ থেকে এই দুই শহরের দূরত্ব দাঁড়াবে ১০০-১২০কিলোমিটারের মধ্যে।
বলা হচ্ছে আমফান বলয় প্রায় ২৫০কিলোমিটার অবধি বিস্তৃত যে কারনে এর প্রভাব নদিয়া অবধি পড়তে পারে আর কেন্দ্র বা চোখ থেকে ১২৫ কিলোমিটার অবধি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। ১২০কিলোমিটার বেগে প্রতিঘন্টায় ঝড় ও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে এই ১২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। ১২ ঘন্টা আগে আমফান যখন দিঘা থেকে ৪৫০কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল তখনই বেলদা,দাঁতন,খড়গপুর ও মেদিনীপুরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ও ভোরে বৃষ্টি বেড়েছে। বুধবার সকাল থেকে হওয়ার গতিবেগ ও দমক বাড়ছে। সকাল ৯ টায় এতদঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার।
কিন্তু এই হিসাবের বাইরেও একটা হিসাব আছে যা সব হিসাবকে গুলিয়ে দিতে পারে তাহল আমফানের ল্যাজ। বলা হচ্ছে ওড়িশার পারাদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া( সকাল ৯টা দূরত্ব ৩৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ)র দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে আমপান। এই দুই জায়গার মধ্যে দিয়ে গলে যাবে আমফান এবং মাথা গলিয়েই মোচড় দিয়ে বাঁক নেবে পূর্বে দক্ষিন ২৪পরগনা হয়ে বাংলাদেশের দিকে। আমফানের মাথা থেকে ল্যাজ যা কিনা প্রায় ৪০কিলোমিটার দীর্ঘ, বাঁক নেওয়ার সময় সেই ল্যাজ মাথার বিপরীতে চলে আসতে পারে অর্থাৎ যা কিনা সমুদ্রের গভীরে তা উত্তরের ৪০কিলোমিটার স্থলভাগের অংশ ছুঁয়ে যেতে পারে। মাত্র ৫মিনিট এই প্রক্রিয়া চললে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারে দাঁতন বেলদা খড়গপুর মেদিনীপুরের। তাই দুপুর ২টা আগে পরের সময়টা খুবই সাবধানে থাকতে হবে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ‘সুপার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ থেকে আমপান এখন ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়র সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হয়েছে। কিছুটা শক্তি হারালেও এখন ‘অতি মারাত্মক’ চেহারা নিয়েই দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও অঞ্চলে আজ, বুধবার বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহবিজ্ঞানীদের অনুমান, সাগরদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে আছড়ে পড়তে পারে আমফান। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনাতেও তা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। সেই সঙ্গে হবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসও। এই তিন জেলার উপকূলে চার থেকে ছ’মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। আমফান আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। এমনকি, এই গতিবেগ বেড়ে তা পৌঁছতে পারে ১৮৫ কিলোমিটারের আশপাশে।
আমফানের ঝাপটায় কলকাতা, হুগলি, হাওড়া এবং নদিয়াতেও বেশ ভালই প্রভাব পড়বে। কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এমনকি, তা বেড়ে ১৩০ কিলোমিটারও হতে পারে। সেই সঙ্গে দোসর হবে প্রবল বৃষ্টি। এবার বুধবার সারাদিন আমফানের গতি প্রকৃতি কোথায় কেমন হতে পারে জেনে নেওয়া যাক।
বুধবার বেলা বাড়লে হাওয়ার গতি বাড়বে। ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা। জোরাল প্রভাব পড়বে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলিতেও। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। গাছ এবং পুরনো বাড়ি নিয়ে সতর্কতা সাত জেলাতে।
কলকাতায় সকাল থেকে ঝড়। হাওয়ার গতি থাকবে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৩০ কিমি। হাওড়া-হুগলিতে হাওয়ার গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১২০ কিমি।বুধবার উত্তর দিকে এগবে আমফান। পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় ঘূর্ণনের গতিবেগ থাকবে ১১০-১৩০ কিলোমিটার। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে ১৬৫-১৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪-৬ মিটার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। নীচু এলাকাগুলো তাতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং কলকাতায়। বৃস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হবে উওর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু জায়গায়, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের কিছু অংশে। বুধবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে। বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হবে সিকিমে। ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায়।