নিজস্ব সংবাদদাতা: ঔরঙ্গাবাদে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ঘরমুখো ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। ভারতীয় রেল ওই শ্রমিকদের আখ্যা দিয়েছে, ট্রেসপাশাস, অবৈধ অনুপ্রবেশ কারী। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, “এটা আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। কারণ, কোথায় কত পরিযায়ী শ্রমিক হাঁটছেন, সেটা আদালত নজরে রাখতে পারবে না। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। কাউকে হেঁটে ফিরতে দেওয়া হবে কিনা, যাঁরা হাঁটছেন তাঁদের খাবার ও জলের ব্যবস্থা হচ্ছে কিনা প্রভৃতি বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য। কেউ রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়েছেন কিনা, সেটা কী ভাবে সুপ্রিম কোর্ট নজর রাখতে পারবে।” দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে এই শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে শুধুই রেশন!
যদিও হাঁটা বন্ধ হয়নি। ঘরে ফিরছেন লাখো লাখো মানুষ আর তাঁদের পায়ে পায়ে হাঁটছে মৃত্যুও। শুক্রবার সেই মৃত্যু ফের কেড়ে নিল ১৪ জন পরিযায়ী শ্রমিককে। গত ২৪ ঘন্টায় সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে।
শুক্রবার মধ্যপ্রদেশের গুনা ও উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে দু’টি দুর্ঘটনায় বাড়ি ফেরার পথে প্রান হারিয়েছেন ১৪ জন শ্রমিক। আহত ৬১ জন। মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী ও উন্নাওয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোরের একটি ঘটনা ঘটে গুনার কাছে। শ্রমিক বোঝাই ট্রাকে ধাক্কা মারে একটি বাস। অন্য দলটি পঞ্জাব থেকে হেঁটে বিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। ভোর রাতে মুজফ্ফরনগরের কাছে হাইওয়ে দিয়ে হাঁটছিলেন তাঁরা। তাঁদের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে সরকারি বাস।
মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুনার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ভোর ৩টে নাগাদ। একটি ট্রাকে ৬৫জন শ্রমিক মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে ফিরছিলেন। গুনা বাইপাসের কাছে একটি বাস উল্টোদিক থেকে ট্রাকটির সামনে চলে আসে। বাসটিতে ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ ছিল না। ঘটনাস্থলেই মারা যান আট জন শ্রমিক। গুনার এসপি তরুণ নায়ক জানিয়েছেন, বাকিরা আহত হলেও কারও অবস্থাই সঙ্কটজনক নয়। পুলিশের বক্তব্য, বাস চালকের ভুলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত আট শ্রমিক রায়বরেলী ও উন্নাওয়ের বাসিন্দা। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জানিয়েছেন, গুনার হাসপাতালে আহতদের যাতে ঠিক ভাবে চিকিৎসা হয়, সে জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। জানিয়েছেন, শ্রমিকদের দেহ তাঁদের গ্রামে ফেরানো হবে।
এদিনের দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে। মুজফ্ফরনগর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঘালাউলি চেকপোস্ট লাগোয়া। ভোররাতে বিহারে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পঞ্জাব থেকে হাঁটতে শুরু করেছিলেন ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের একটি দল। দিল্লি-সহারানপুর হাইওয়ের উপরে তাঁদের পিষে দেয় একটি সরকারি বাস। ঘটনাস্থলেই ছয় জন শ্রমিক মারা যান। এঁদের বাড়ি পটনা, ভোজপুর ও গোপালগঞ্জে। এঁদের মধ্যে পিতপুত্র রয়েছেন। ৫২ বছর বয়সি হারেক সিংহ ও তাঁর ২২ বছর বয়সি পুত্র বিকাশ দু’জনেই প্রাণ হারিয়েছেন। এঁদের বাড়ি গোপালগঞ্জে। দুর্ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত চার জন। উত্তরপ্রদেশ পরিবহণের বাসটি সহারানপুরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নামিয়ে দিয়ে আগরায় ফিরছিল। মেডিক্যাল রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বাসটির চালক রাজবীর মদ্যপান করেছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে গুজরাত থেকে পায়ে হেঁটে উত্তরপ্রদেশের গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন সাত জন শ্রমিক। আর ১০০ কিলোমিটার মতো পথ বাকি ছিল। তখনই বরাবাঁকি এলাকায় মারাত্মক এক পথ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় শ্রমিকদের ওই দলটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিন জন। সাত জন গুরুতর জখম, লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা।
বৃহস্পতিবারই ট্রাকে করে আরও এক দল শ্রমিক মহারাষ্ট্র থেকে ফিরছিলেন উত্তরপ্রদেশে। বাহরাইচের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় ট্রাকটি। এক জন শ্রমিক মারা যান ঘটনাস্থলেই আরও ৩২ জন জখম হয়ে ভর্তি হাসপাতালে। জালাউন এলাকায় আরও একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান আরও ২ শ্রমিক। সব মিলিয়ে গত ২৪ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে মোট ২০ জনের। আর লকডাউনে ঘরে ফিরতে চেয়ে কোনও দিনই ঘরে ফেরা হলনা এমন মানুষের সংখ্যা দেড়শ ছুঁই ছুঁই।