নিজস্ব সংবাদদাতা: উদ্যোক্তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক রং রয়েছে, অনেকেই শাসকদল অথবা প্রশাসনিক পদে কিন্তু ‘এখানে কোনও রাজনীতি নেই’ য়ের এক ভিন্ন ভাবনা থেকে অতিমারির দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অন্যরকম প্রয়াস নিয়েছেন কাজ সবংয়ের কিছু তৃণমূল নেতা। অদ্ভুদ ভাবনার এই কাজটি হল বিনামূল্যে সবজি বাজার। সোমবার সবংয়ের তেমাথানি বাজারে তৃতীয় দিনে নিয়ম মেনেই সবজি বাজারে এলেন ক্রেতারা। সবজি নিলেন এবং থলে ঝুলিয়ে ফিরেও গেলেন। থলের ভেতরে গেল আলু সহ ১১ধরনের সবজি। যার মধ্যে ছিল কুমড়ো,পুইশাক, চাল কুমড়ো, উচ্ছে, বেগুন, কাঁচা লঙ্কা, পাতি লেবু ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিদিনই গড়ে ১৫০ জন বিনে পয়সার ক্রেতা সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনেই নিয়ে যাচ্ছেন এক সপ্তাহের বাজার। ফের আসবেন পরের সপ্তাহের ঠিক একই দিনে।
উদ্যোক্তাদের কমন নাম ”আমরা ক’জন,” শুধুমাত্র করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে এই সাংগঠনিক প্রয়াস। যেখানে রয়েছে সবং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনিয়া মান্ডি, উপপ্রধান সনাতন দিত্য, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তাপস পাত্র, তৃণমূলের দলীয় সঞ্চালক নারায়ন সাঁতরা, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্কর ঘোড়াই, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ব্লক আহবায়ক বিপুল মাইতি, পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম মাইতি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শেখর মাইতি ইত্যাদিরা যারা সবাই শাসকদলের প্রতিষ্ঠিত নেতা। যদিও বিনামূল্যের সবজি বাজারের পেছনে টাঙানো ফ্লেক্সটি দেখলে চমকে উঠতে হয় যেখানে লেখা, দল নয়, পতাকা নয়, মানুষের সাথে, মানুষের পাশে।লেখাটি নিশ্চিত ভাবেই একটি অন্যবার্তা দেয় যেখানে স্পষ্ট হয়ে যায়, দল আর পতাকার বাইরেও মানুষ থাকে অথবা আমার দল ও পতাকার বাইরে যে অন্য দল অথবা পতাকা বহন করে সেও একজন মানুষ। আর এই অতিমারির সময়ে সেই মানুষও বিপন্ন।
সেই কথাই জানালেন পার্থ প্রতিম মাইতি। বললেন, ‘ সময়টা রাজনীতির নয়, আপামর মানুষ বিশেষ করে গরিব মানুষ আজ বিপন্ন। তার পাশে দাঁড়ানোই এই সময়ের কাজ। আমার দলীয় পরিচয় যাতে তাঁর কাছে সঙ্কোচের কারন না হয়ে ওঠে তাই পতাকা বিহীন এই উদ্যোগ। আমরা যাঁদের পাশে দাঁড়াবো কিংবা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে যারা আমাদের সাহায্য করবেন, আমাদের উদ্যোগে সামিল হবেন সেই বৃহত্তর জায়গার কথা ভেবেই এই উদ্যোগ কারন এই বাজার আরো দীর্ঘদিন চালাতে হবে অন্তত লকডাউন পর্যন্ত।”
বাজারের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে বিপুল মাইতি বলেন, “দেখুন সরকার চাল, আটা দিচ্ছে কিন্তু মানুষতো আর শুধু ভাত কিংবা রুটি খেতে পারবেননা। তাই একটু শাক সবজির ব্যবস্থা করেছি। তেল বা মশলার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালই হত কিন্তু আমাদের সাধ্য নেই আপাতত।”
কিভাবে বাজারের ক্রেতা নির্বাচন করা হচ্ছে সেই পদ্ধতি সম্পর্কে সনাতন দিত্য জানালেন, ” দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টি বুথ রয়েছে। এই বুথগুলির একেবারে প্রান্তিক স্তরে থাকা গরিব পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে বুথ পিছু ৫০ থেকে ৭০ টি পরিবার, যেখানে যেমন প্রয়োজন আছে তাঁদের কার্ড দিচ্ছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত। এখানে দারিদ্র্যকেই একমাত্র প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, কোনও রঙ নয় । কোন গ্রাম কবে বাজারে আসবে বলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনেই তাঁরা সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।”
শেখর মাইতি বলেন, ” প্রতিদিন প্রায় আলু নিয়ে চার সাড়ে চার হাজার টাকার সবজি দেওয়া হচ্ছে। আমরা কৃতজ্ঞ তাঁদের কাছে যারা এই সবজি দিতে এগিয়ে এসেছেন, সেই তেমাথানি সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী তথা আড়তদার অদ্বৈত মাইতি ও রঞ্জিত হুইদের কাছে।” অভিনব বাজার পেয়ে আপ্লুত মোগলানীচকের মইদুল ইসলাম, ভিকনী নিশ্চিন্তপুরের স্বপন দোলই,তেমাথানির পঞ্চানন মন্ডলেরা। মইদুল জানালেন, ” সরকারের রেশনের পাশাপাশি আমরা কজনের এই সবজি পেয়ে সত্যি খুব উপকার হয়েছে। আজ পুই আর কুমড়ো রান্না করতে বলেছি ঘরে। কাল বেগুন টেগুন দিয়ে একটা চচ্চড়ির মত করে নিলেই হবে। সব চেয়ে ভাল লাগবে বাচ্চাগুলোর। ক’দিন শুধু ফ্যান ভাত খেয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই যাচ্ছিল।”