নিজস্ব সংবাদদাতা: ঝাড়গ্রাম জেলার ওড়িশা সীমান্ত ঘেঁষা নয়াগ্রামের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই ভাইয়ের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যদিও ঝাড়গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই কারন ওই দুই তরুণ কলকাতা সূত্রে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তৎপরতার সঙ্গেই তাঁদের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ফলে তাঁদের দ্বারা জেলার কেউই সংক্রমিত হননি। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গেছে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে তাদের লালা রস পরীক্ষায় করণা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরই তাদের পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।
আক্রান্ত দুই ভাই এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে কলকাতার পার্কস্ট্রিট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। ভাড়া থাকতেন কলকাতারই বেগ বাগান এলাকায়।
লকডাউনের ফলে রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মালিক তাদের বেতন দেননি। অন্যদিকে ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ির মালিক ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। এরপরই ঝাড়গ্রামের মোট আট জন ২৮ এপ্রিল রাতে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাস্তায় পুলিশ তাঁদের আটকাতে পারে এটা অনুমান করেই মূল সড়ক এড়িয়ে হাওড়া ও দুই মেদিনীপুরের ছোট ছোট সড়ক ব্যবহার করে ১ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ী থানার খাজরা বাড়িতে পৌঁছান। উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে ভসরাঘাটের সুবর্নরেখা নদীর ওপর জঙ্গলকন্যা সেতু পেরিয়ে নয়াগ্রামের পথে যাবেন কিন্তু খাজরাবাড়িতেই পুলিশ তাঁদের আটকায়। তারপর পুলিশ খড়গপুরের হিজলি গ্রামীন হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ছেড়ে দেয়। ফের তারা হাঁটা শুরু করেন এবং ২মে জঙ্গলকন্যা সেতুর ওপর ঝাড়গ্রাম পুলিশের কাছে আটক হন। ৮ জনকেই কোয়ারেন্টাইন করা হয়।
যেহেতু তাঁরা করোনা জর্জরিত কলকাতা থেকে ফিরেছিলেন তাই কোনও ঝুঁকি নেয়নি ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কোয়ারান্টিনে থাকতে বলা হয় তাঁদের। এরপর এই দুই যুবকের কিছু উপসর্গ দেখা দিলে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে লালা রস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেলে দুজনকে সঙ্গে সঙ্গে পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঝাড়গ্রাম থেকে আশা দুই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে বড়মা হাসপাতালের নোডাল আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ রজক জানিয়েছেন।
শুক্রবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পুনরায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।কলকাতা থেকে আসা ওই দুই যুবক ঝাড়গ্রামে ছিলেন না এবং এখানে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি বলে ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।যদিও এই বিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলাশাসক কোনো মন্তব্য করেননি। এর আগেও পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা যোগে ঝাড়গ্রামের এক বাসিন্দাকে বড় মা কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তিনি করোনা নেগেটিভ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছেন। এই ঘটনার পরই জঙ্গলকন্যা সেতুতে প্রহরা আরও জোরদার করা হয়েছে। একজন ডেপুটি পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কড়া নজরদারি রেড জোন পশ্চিম মেদিনীপুর আর গ্রীন জোন ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যবর্তী এই সেতুর ওপর। ওই দুই তরুণের সঙ্গে থাকা বাকি ৬ জনকে কড়া নজরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।