✒️কলমে: শ্রীতনু চৌধুরী
‘যমুনা ও যমুনা’ – গানটা গেয়েই পাড়ার আলোকদা এখন আলোক লোহার থেকে হয়ে গেছে আলোক দাস বাউল। বিশুকাকা,ঝন্টু,রঘু সহ আরো কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছে একটা আখড়া। ওদিকে এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাব কমরপুর তরুণ সংঘ তো আছেই। করোনা সংক্রান্তিতে ক’ দিন ধরেই চলছে ১০০ দিনের কাজ। আজও আলোকদা আর তার যমুনা সহ যাদের জবকার্ড আছে তারা প্রায় সকলে মিলে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে সাতসকালে এসে উপস্থিত ক্লাবের চাতালে। গৃহবন্দি থেকে থেকে যেন হাঁফিয়ে উঠেছিল সবাই। এখন কাজের অছিলায় বাইরে বেরিয়ে মাস্টার রোল এ সই করেই খালাস। ন’ টা পর্যন্ত সেখানে বসেই চলবে ইয়ার্কি, ফাজলামি আর খোশগল্প। কোনো প্রকল্প ছাড়াই চলছে ১০০ দিনের কাজ। তাই রাজ্যের পঞ্চায়েতও কোনো ফলক বসাতে পারেনি। লাগে কড়ি দেবে গৌরী সেনের মত এই লক- ডাউনে মানুষের হাতে কিছু কাঁচা পয়সা তুলে দেবার জন্যই নাকি এমন উদ্যোগ।আর কিছু জানুক না জানুক,এটা কিন্তু মানুষ ভালোই জানে। তাই কাজের নামে হচ্ছে অষ্টরম্ভা! সকাল থেকে একঝুড়ি মাটিও কোথাও পড়েনি । নাই পড়ুক। সবাই ক্রমশ কেমন যেন হয়ে পড়ছে ভিক্ষান্নের দাস। একবারও বলছে না কেউ রাষ্ট্র কেন আমাকে ভিক্ষা দেবে? আমি কি রাষ্ট্রের উচ্ছিষ্ট? ভোটবাক্স কোন জাদুবলে যেন মজদুরি আর ভিক্ষাবৃত্তিকে এক করে দিতে পারে । তাই মেহনত শব্দটিকে আজ কেবল মনে হয় আভিধানিক বড়ই প্রাগৈতিহাসিক।
পাশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্লাবটিকে প্রাধান্য দেবার জন্যই মূলত রাজ্য সরকারের ক্লাব অনুদানের করুনা থেকে আমাদের ক্লাবটি আজও বঞ্চিত। যে ক্লাব প্রাঙ্গণে সাহিত্য আকাদেমি র গ্রামালোকের মত অনুষ্ঠান হয়েছে ক’ মাস আগে,আজ সে প্রাঙ্গণের বড় করুন দশা। ফোনটা তুলে উত্তম ও সমীরকে( ওরা ক্লাবের কর্মকর্তাও) বললাম ‘হ্যাঁ রে,সবাই তো ক্লাবেই বসে আছিস, দু ঝুড়ি করে মাটি ফেললেও এই ক’ দিনে ভরাট হয়ে যাবে ক্লাবের বাইরের ধসে পড়া নিচু জায়গাটা। নাহলে পরে তো আবার নিজেদেরকেই ভরাট করতে হবে। সামনে ২৫ শে বৈশাখ’।বলল, ‘আচ্ছা তাহলে সবাইকে বলে দেখি দাঁড়াও, পরে তোমাকে জানাচ্ছি’। ঘন্টা দুয়েক পরে গোপাল আর তার বউ’ র ফোন- ‘মাটি ফেলা হয়ে গেছে দাদা, একদিন আমাদের ফিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু’। মনটা একাধারে খুশি ও হতাশায় ভরে উঠল। এটা কি ওদের লোভ না আব্দার? তবুও বললাম ‘হাঁ অবশ্যই খাওয়াবো’ আর আশ্চর্য হয়ে ভাবতে লাগলাম যারা ক্লাবকে এত ভালোবাসে তারা দেশকে ভালোবাসে না কেন?