নিজস্ব সাংবাদদাতাঃ আসা হয়ে গেছে ৭৯০ কিলোমিটার আর যেতে হবে আরও ৫৫০ কিলোমিটার! মাঝে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার জুটে ছিল পণ্যবাহী গাড়ি। বাকিটা শুধুই হাঁটা। মোট ১৯ জন ফিরছেন উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলার পথে। এরমধ্যে ২ জন গর্ভবতী। লকডাউনে কাজ গিয়েছে, ভাঁড়ারে পয়সা নেই। এই অবস্থায় বাড়ি না ফিরলে পেটের দুটিকে বাঁচানো মুশকিল তাই বাড়ির পথে। বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনম থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় পৌঁছাল ২ গর্ভবতী মহিলা সহ উত্তর দিনাজপুরের ১৯ জন শ্রমিক, যাঁদের পা দেখলে রীতিমত চমকে উঠতে হয়, দগদগে ফোস্কা!
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় নির্মান শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে আটকে পরে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলার এই শ্রমিকরা। কাজ বন্ধ, ঠিকাদারের দেখা নেই। তাই সেখান থেকে কখনো পণ্যবাহী গাড়ি চেপে, আবার কখনো পায়ে হেঁটে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকনায় পৌঁছায়। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছে। আর হাঁটতে না পেরে গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় নজরে পড়ে স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যদের। অবশেষে স্থানীয় ক্লাব সদস্য এবং পুলিশের সহযোগিতায় আশ্রয় হয়েছে রামজীবনপুরে। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বিডিও অভিষেক মিশ্র জানিয়েছেন, ঘটনার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ওদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওঁদের মধ্যে যে দুজন গর্ভবতী মহিলা রয়েছে তাদের স্পেশাল চেকআপের ব্যবস্থা করা হয়েছে’।
জানা গিয়েছে, এঁদের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা এলাকায়। পরিযায়ী শ্রমিক, পুজা পন্ডিত, অমিত পণ্ডিতরা বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরেই বিশাখাপত্তনমের ওই নির্মাণকারী সংস্থার মালিক পালিয়ে যায়, আর সমস্যায় পড়ি আমরা। বাড়ি ফিরে আসার জন্য ওখানে অনেক প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে ঘুরেও কোন সুরাহা হয়নি। অগত্যা পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছি বাড়ি ফেরার জন্য। পথে অনেকেই দেখেছে কেউ কোন সাহায্য করেনি। এখানে একটি গ্রামে ক্লাবের কিছু লোকজন আমাদের খাওয়ালেন। পুলিশকে বলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন, ওনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।
দুই গর্ভবতী মহিলার কাতর মিনতি আমাদের গর্ভে সন্তান রয়েছে। আর হাঁটতে পারছিনা। প্রশাসন যদি আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেদেন খবুই ভাল হয়’। স্থানীয় বিডিও জেলা প্রশাসনকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন। ক্লাবের সদস্যরা অবশ্য জানিয়েছেন, যতদিন না ব্যবস্থা হয় তারা পাশে থাকবেন।