নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনের কী অপার মহিমা! ধোঁয়া ধুলিধূসরিত মুক্ত পৃথিবী। চোখের সামনে ভেসে উঠল পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ! যা দেখার জন্য গোটা বিশ্ব ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারত কিংবা নেপালে, যা জয় করার জন্য পৃথিবীর পর্বতারোহীরা স্বপ্ন দেখে থাকে সেই মাউন্ট এভারেস্ট কে নিজেদের বাড়ির ছাদ থেকে দেখতে পেল বিহারের সীতামরি জেলার সিংহবাহিনী গ্রামের বাসিন্দারা। সোমবার এমনই ছবি দেখতে পেয়ে নিজের বাড়ির ছাদ থেকে তা মোবাইল বন্দি করেন সিংহবাহিনী গ্রামের মুখিয়া ঋতু জয়সওয়াল। তারপর নিজের ট্যুইটার আ্যকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন তা। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মত।
প্রথমে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নেটিজেন রা । প্রশ্ন ওঠে এটা যে বিহার থেকেই তোলা ছবি তার প্রমান কি? উত্তরে ঋতু জানান, ‘সাতসকালে এই দৃশ্য দেখার পরে প্রথমে আমারও বোধগম্য হচ্ছিল না। কারন আমি নিজে এ গাঁয়ের মেয়ে নই, বিয়ে হয়ে এসেছি। গ্রামের তরুনের দলও একে অপরকে জিজ্ঞাসা করছিল এটা কি? । তখন নিজেদের অতীতের স্মৃতি হাতড়ে বয়স্ক মানুষরা জানান ওঠা এভারেস্ট। এরপরই আমি টুইট করি।’
ঋতু লেখেন, তাঁর স্বামী বলেছেন যে তাঁদের ছোটবেলায় এভাবেই গ্রাম থেকে এভারেস্ট দেখা যেত। কিন্তু, আস্তে আস্তে পরিবেশ দূষিত হওয়ার ফলে তা আর দেখা যেত না। তাছাড়া সিংহবাহিনীর গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিকে এভারেস্টের অবস্থান। এই ছবিটি সেই উত্তর-পূর্ব দিকেরই। ঋতুর ভাষায়, আমার স্বামী আটের দশকে শেষবারের মত এভারেস্ট দেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
যদিও এরপরও খিল্লি থামেনি অনেকেই ছবিটি জাল, সুপার ইম্পোজ বলে দাবি করেন। কিন্তু এবার আসরে নামেন ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের এক আধিকারিকও।ঋতুর ছবি রি-ট্যুইট করে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের আধিকারিক প্রভীন কাসওয়ান। ক্যাপশনে লেখেন, এই সেই মুহুর্ত যখন বিহারের সিংহবাহিনী গ্রামের মানুষরা তাঁদের বাড়ি থেকেই এভারেস্টকে দেখতে পেলেন। তাঁরা বলছেন, এই ঘটনা কয়েক দশক পরে ঘটল।
ঘটনাটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভূতত্ত্ববিদদেরও। তাঁরা জানান, বিহারের সীতামরি জেলা তিরহুট ডিভিশনের মধ্যে পড়ে যা ভারত নেপাল সীমান্তের কাছাকাছি। সীতামরি জেলার সীমান্ত থেকে এভারেস্টের আনুমানিক দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার আর সিংহবাহিনী গ্রাম থেকে দূরত্ব আনুমানিক ১৯৪ কিলোমিটার। লকডাউনের ফলে আশপাশের পরিবেশ থেকে নদীনালা পরিশুদ্ধ হয়েছে তারাও। আর এর ফলেই বিহারের গ্রাম থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। সত্যি এটাও যে একসময় খালি চোখেই এভারেস্ট দেখত সিংহবাহিনীর মত সীতামরির অনেক গ্রামই।
কিছুদিন আগেই এই একই ভাবে পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে হিমাচল প্রদেশের ধৌলাধর পর্বত শৃঙ্গ আর সাহারানপুর থেকে দেখা মিলেছিল উত্তরাখণ্ডের পর্বতরাজি কিন্তু এবার যা হল তা সত্যি চমকে দেওয়ার মতই।
সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে বিভিন্ন জায়গার ছবি ও ভিডিওতে এর আগে দেখা মিলেছে রাস্তায় নেমে পায়চারি করছে পেঙ্গুইন তো কোথাও বাড়ির বাইরে ঘুরপাক খাচ্ছে হরিণ। কখন পেটভরতি খাবার খেয়ে পরমানন্দে নাক ডাকছে সিংহ তো কখনও ছানাপোনাদের নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে বাঘমামা! সমু্দ্র সৈকতে এসে খেলা করছে ডলফিন তো আকাশে ঝড় তুলছে পাখির দল। জনবসতির রাস্তায় ময়ূরের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে, দিঘার সৈকতে ফের ফিরেছে লাল কাঁকড়া আর ওড়িশার সৈকতে লাখে লাখে ডিম পাড়ছে দৈত্যাকার কচ্ছপ অলিভ রিডলে। ‘পৃথিবী ফের তার চেনা জায়গা খুঁজে পাচ্ছে।’ লিখেছেন ঋতু।