নিজস্ব সংবাদদাতা: শুক্রবার রাতে ততটা টের পাওয়া যায়নি সর্বনাশের কারনটা। কিন্তু সকাল হতেই কঙ্কালসার দোকান গুলোর ভেতরে থাকা বিস্ফোরন হওয়া ফাঁকা গ্যাস সিলিন্ডারের সারি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিল। ১৭টি দোকানের মধ্যে দু’তিনটি টিফিন বানানোর দোকানের ভেতরে থাকা গোটা দশেক গ্যাস সিলিন্ডার! যারা মধ্যে দুটো বিষ্ফোরণ ঘটেছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে মাত্র দু’তিনটি তেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাকি গুলো ফাটলে কী হত কে জানে ?
মূলতঃ এক সময়ে বাইরে ডালা মেলে বসত যে সবজি ওয়ালারা তাঁদের জন্যই আইআইটি টেক মার্কেট কমিটি একসারিতে এই দোকানগুলির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে গিয়েছিল কয়েকটি টিফিন বানানোর দোকান, পেপার আর ম্যাগাজিনের দোকান, ফলের জুস কিংবা ডাবের দোকানও। আর ওই টিফিন বানানোর দোকানেই মজুত ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ সম্ভবত শট সার্কিট থেকেই একটি দোকানে আগুন লাগে। লকডাউনের কারনে ফাঁকা বাজারে সেই আগুন কারও নজরে পড়েনি।
অধিকাংশ দোকানেই কিছুনা কিছু তার্পোলিন মজুত ছিল। ফলে আগুন ছড়াতে সময় লাগেনি বেশি আর তারপর সেই আগুন টিফিন বা খাবার বানানোর দোকানে আসতেই আগুনের প্রচন্ড তাপে ফাটতে শুরু করে গ্যাস সিলিন্ডার গুলি। সর্বনাশের সাত কাহন সেখানেই রচনা হয়ে যায়। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দোকানে। আগুন গ্রাস করে নেয় সর্বস্ব।
গ্যাস সিলিন্ডারের জন্যই বাধা প্রাপ্ত হয়েছে দমকলকর্মীদের আগুন নেভানোর কাজও। আগুনের গর্ভে চলে যাওয়া দোকানগুলির ভেতরে ঠিক কতগুলো সিলিন্ডার রয়েছে এবং কী অবস্থায় রয়েছে বলার মত কেউ ছিলনা। সেগুলি ফের বিস্ফোরন হতে পারে অনুমান করে দোকানগুলির কাছাকাছি গিয়ে আগুনের সাথে লড়াই করা যায়নি, দমকলের তিনটি ইঞ্জিনকে জল ঢালতে হয়েছে নিরাপদ দুরত্ব থেকেই। এমনটাই জানিয়েছেন দমকলকর্মীরা।
পরের প্রশ্ন হল এই সবজির দোকানগুলি যাদের দোকান না বলে ছাউনি বলাই ভাল তার অভ্যন্তরে খাবার দোকান করার অনুমতি ছিল কিনা নাকি বিনা অনুমতিতেই চলছিল? মনে রাখতে হবে আগুন যেখানে লেগেছে সেটা একটা আলাদা সারি হলেও মুল মার্কেট কমপ্লেক্স থেকে তার দুরত্ব ৭ মিটারেরও কম। কোনও ভাবে আগুন টপকে মুল কমপ্লেক্সে পড়লেই সর্বনাশের ষোলো কলা পুর্ন হয়ে যেত কারন কোটি কোটি টাকার সামগ্রী মজুত রয়েছে ওই কমপ্লেক্স ও লাগোয়া প্রায় ৫০টি দোকানে।
শুক্রবারই মেয়াদপুর্ন হয়েছে লকডাউনের একমাসের। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘোষনা করেছেন সংক্রমিত এলাকার বাইরে দোকানপাট বিশেষ করে ছোট দোকানগুলি এবার নিয়মিত খোলা থাকবে। একমাস পেটে খিল মেরে পড়ে থেকে ফের দোকান খোলার স্বপ্ন দেখছিল সেবক দে, রমেশ দে, মৃনাল দে, রিনা দে রা। আইআইটি ক্যাম্পাসের আশেপাশে রবীন্দ্রপল্লী , তালবাগিচা, বলরামপুর, সুকান্ত নগর ইত্যাদি এলাকার এই বাসিন্দাদের জীবন যাপনের এটাই ছিল একমাত্র সম্বল। সব হারিয়ে এখন তাঁদের পাগল হওয়ার যোগাড়।