নিজস্ব সংবাদদাতা: রেশন নিয়ে ক্রমশ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে রাজ্যে । পরিমান মত খাদ্যশস্য না মেলায় জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। হয়েছে ভাঙচুর। রেশনের দোকানদারের পাশাপাশি একাধিক জায়গায় ক্ষোভ ফেটে পড়তে দেখা গেছে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। কোথাও সরাসরি রেশন দ্রব্য লুটের আভিযোগ এসেছে তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধেই। পরিস্থিতি এরকম থাকলে দিন যত যাবে ততই বাড়বে বিক্ষোভ এমনটাই অনুমান করে এবার রেশন বিলি নিয়ে নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে মূখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এমনটাই জানা গেছে পাশাপাশি এদিনই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে খাদ্যসচিব মনোজ আগরওয়ালকে।
একটি সুত্রে জানা গেছে আলোচনার সময় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিযোগ অবিলম্বে খতিয়ে দেখে সেগুলি সংশোধনের নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রীকে। আর ওই সময়েই তিনি মুখ্যসচিবকে বলেন, খাদ্যসচিবের কাজে তিনি খুশি নন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “আগামী ছ’মাস রেশন ফ্রি থাকবে। এনিয়ে জলঘোলা করার কোনও দরকার নেই। সরকার তার সাধ্যমতো সমস্ত উদ্যোগ নিচ্ছে।” এদিন তিনি বলেন, অনেক জায়গায় দোকান ছোট হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেশি মানুষকে রেশন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার থেকে রেশন দোকানের পরিবর্তে অন্য জায়গাতেও চাল, গম ইত্যাদি বিলি করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা খাদ্য দফতরকে নির্দেশ দিয়েছি, জায়গা চিহ্নিত করে মানুষের একমাসের রেশন একবারে মিটিয়ে দেওয়া হোক।” তিনি আরও বলেন, এবার থেকে রেশনে এক কেজি করে ডালও দেওয়া হবে। তাছাড়া আসন্ন রমজান মাসে ফি বছর যা যা সুবিধা দেওয়া হয় তা বজায় থাকবে। উল্লেখ্য দেশে লকডাউন চালু হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান ঘোষনা করেছিলেন , এবার থেকে রেশনে একসঙ্গে ৬ মাসের খাদ্যশস্য তোলা যাবে৷ দেশের ৭৫ কোটি মানুষ গণবণ্টন সিস্টেমের আওতায় পড়েন। এবার থেকে চাইলে তাঁরা ৬ মাসের খাদ্যশস্য একসঙ্গে তুলে নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলির কাছেও নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।
এর পরেই পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। রাজ্যে রেশন দোকান থেকে ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে চাল দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ২ টাকা কেজি দরে মাসে ৫ কেজি করে ব্যক্তি পিছু চাল পাওয়া যায় রেশন দোকান থেকে। সেই চালটাই এবার বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানায় রাজ্য সরকার।
যদিও রেশন বিলি শুরু হওয়ার পরেই বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মিলছে না এমন দাবিতে চলে ভাঙচুর। কয়েকটি জায়গায় রেশন দ্রব্য পাচারের ছবিও ধরা পড়ে। অভিযোগও ওঠে কালোবাজারির। ময়দানে নামে বিরোধীরাও। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস প্রত্যেকেই দাবি করেন তৃণমূল নেতাদের মদতেই রেশন দ্রব্য লুট চলছে। ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী স্বয়ং। একটি রেশন দোকান থেকে এক কাউন্সিলরের নিয়ে যাওয়া চালের বস্তা ফেরৎ দিতে বাধ্য করেন তিনি। এরপর সরাসরি মূখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগে বিরোধীদের আভিযোগ অনেকটাই সীলমোহর পেয়ে গেল।