নিজস্ব সংবাদদাতা: চিন তো দুরের কথা এশিয়ার কোনও দেশ থেকেই নয়, গত দু’-তিন মাসে ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে আসা পর্যটকদের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।এখনও পর্যন্ত করোনার আক্রমণে আমেরিকায় মৃত্যু হয়েছে ২০হাজারেরও বেশি মানুষের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ছাড়িয়ে। শনিবারই গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮ জনের মধ্যে। রবিবার তা আরও বেড়েছে। আর এখন করোনার এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে আমেরিকা।
মার্কিন দৈনিকের ওই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই করোনা সংক্রমণ শুরু হয় আমেরিকায়। এবং মার্চের ১১ তারিখ অবধি ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় এসেছেন পর্যটকরা। এবং ৩১ জানুয়ারি চিন থেকে আকাশপথে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মার্কিন মুলুকের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে করোনা নিয়ে গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
নিউ ইয়র্কের একদল গবেষকের মতে, মাত্র দু’সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে এতটা সংক্রমণ হতে পারে না। দু’তিন মাস ধরে করোনা ছিল। কিন্তু সেভাবে প্রকাশ পায়নি। এবার ঠিকমতো পরীক্ষা চালু করতেই আসল সত্যিটা বেরিয়ে এসেছে। মার্কিন গবেষকরা বলেছেন, ইটালি ও স্পেনের অবস্থা দেখলেই নিউ ইয়র্কের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে শক্তিধর আমেরিকা যে করোনার কাছে জবুথবু তা স্পষ্ট। সেখানেও লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ১০৮ জন।
উল্লেখ্য, ঠিক ১০২ দিন আগে শোনা গিয়েছিল একটি নতুন ভাইরাস থাবা বসিয়েছে দুনিয়ায়। তারপর ধীরে ধীরে বিশ্ববাসী পরিচিত হল কোভিড-১৯ শব্দটির সঙ্গে। আর সেঞ্চুরি পার করে তার বীভৎস রূপ দেখে ত্রস্ত পৃথিবী। কারণ এই মারণ ভাইরাস ১০২ দিনে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের। যতদিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে করোনার শক্তি। বাড়ছে বিস্তার। এএফপির খবর অনুযায়ী, ডিসেম্বরের পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৩টি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৬ লক্ষ টপকে গিয়েছে। যার মধ্যে তিন লক্ষ ৩১ হাজার মানুষ এই সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে এই ত্রাহি ত্রাহি রব যে সহজে শেষ হওয়ার নয়, তা বেশ স্পষ্ট। এভাবে আরও কতদিন বহাল থাকবে শ্মশানের নিস্তব্ধতা, ভেবে কূল পাচ্ছেন না গবেষকরাও।
এতদিন পর্যন্ত একদিনে মৃতের সংখ্যাটা দু’হাজারেই আটকে ছিল। কিন্তু, এবার বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তার গণ্ডি টপকে গেল আমেরিকা। শনিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত সেখানে মোট ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫৩৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছিল । রবিবার সেই সংখ্যাটাই ৫লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে বিভিন্ন জায়গায় গণকবরও খোঁড়া হচ্ছে বলে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিতে।
প্রথমদিকে গুরুত্ব দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিদেশী মুদ্রা লাভের আশায় হাট খোলা রাখা হয়েছিল দেশের দরজা। চলেছে বিচ ফেস্টিভ্যাল, খোলা রাখা হয়েছিল স্কুল কলেজ, ইউনিভর্সিটি। উৎপাদন ঘাটতির আশংকায় বন্ধ করা হয়নি কারখানা, শ্রমিকরা কাজ করে গেছেন। হোটেল রেস্তোরাঁয় বিদেশীদের সাথেই চলেছে খানাপিনা আর হিসাব বলছে সেখানেই সংক্রমনের হার সব চেয়ে বেশি হয়েছিল যা ক্রমে গোষ্টি সংক্রমনের রূপ নিয়েছে। ব্যর্থ আক্রোশে প্রথমে চিনের দিকে মুষ্টি তুলেছিলেন ডোনাল্ড ট্র্যাম্প আর নিজের ঘরে সিঁদ কেটে গিয়েছে লোভ। দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। এখন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে ধনতন্ত্রের ফাঁপা জৌলুস। হতাশা অসহায়তা গ্রাস করছে সে দেশের মানুষকে।