নিজস্ব সংবাদদাতা: মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে শহরেরই একটি লজে কোয়ারেন্টাইন করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার সম্মুখীন হতে হল পুলিশকে।শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরের শেখপুরা এলাকায় প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় ঘটনাকে ঘিরে। প্রসঙ্গত, বেলদা থানার একটি গ্রামের করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসায় শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় ৪০জনকে কোয়ারেন্টাইন করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। সেইমতো শুক্রবার বেশকিছু কর্মীকে মেদিনীপুর সদর ব্লকের কর্মতীর্থে কোয়ারেন্টাইন করার হয়।
এরপর শনিবার একটি হাসপাতালের তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে মেদিনীপুর শেখপুরা এলাকার একটি লজে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তিন কর্মীকে লজে নিয়ে যাওয়ার পরেই প্রবল বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে এলাকায়। এলাকাবাসীর দাবি, তাদের সুরক্ষার কথা না ভেবেই লজে কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে ওই কর্মীদের। স্থানীয়দের আভিযোগ তাঁরাও শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে পরিবারে থাকেন। ওইসব তিন কর্মীর থেকে করোনা ছড়ালে তার দায় কে নেবে? ঘটনাস্থলে মেদিনীপুর শহরের বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। জেলা প্রশাসনের স্বাস্থ্যকর্মীরা জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে করোনা বাতাসে ছড়ায়না। এঁরা বাইরে বের হবেননা। ১৪দিন লজের ভেতরেই থাকবেন কিন্তু তাতেও বোঝানো যায়নি তাঁদের। স্থানীয়দের চাপে পড়ে অবশ্য তিন কর্মীকেই এলাকা থেকে নিয়ে চলে আসে পুলিশ। ঘটনার পর দীর্ঘক্ষন এলাকায় উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানার পুলিশ।
অন্যদিকে ওই বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্মী প্রশাসনের নিয়ম মেনে ঘরে থাকছেননা। যখন তখন ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, রাস্তার কলে জল ভরছেন, বাজারহাট করছেন এই আভিযোগ তুলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় শহরের বল্লভপুর এলাকাতেও। প্রশাসন ওই ব্যক্তিকে ঘরে থাকার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছে। অন্য আরও একটি ঘটনায় ওই বেসরকারি হাসপাতালেরই দুই মহিলা কর্মী প্রশাসনের কাছ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ পেয়ে কেশপুর থানা এলাকায় নিজেদের গ্রামে ফিরলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রামের মানুষ। তাঁদের গ্রামে থাকতে দেওয়া হবেনা বলে জানিয়ে দেয় জনতা। বাধ্য হয়ে তাঁদের মেদিনীপুর শহরে ফিরে আসতে হয়।
ঘটনা হচ্ছে বেলদার কোরোনা আক্রান্ত যে বৃদ্ধ বর্তমানে ওড়িশার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ মেডিক্যাল সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি পর্যায়ক্রমে এই দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছিলেন তার আগেই। যার ফলে প্রশাসন তিন চিকিৎসক সমেত ওইসব স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইন করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু ওই হাসপাতাল দুটির অধিকাংশ কর্মীই মেদিনীপুর শহর ও তার আশেপাশেই থাকেন তাই শহর জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যদিও প্রশাসন জানিয়েছে এই আতঙ্ক ভিত্তিহীন। প্রত্যেকে নিজ নিজ ঘরে থাকলে কোনও সমস্যাই নেই।