নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর ওয়ার্কশপের সিএমই গেট দিয়ে যদি ঢোকা যায়, যার ঠিক পাশটাতেই ক্লক টাওয়ারের চুড়ায় এখনও ঠিক ঠিক সময় বলে দেয় শহরের প্রাচীনতম সুইস মেড ঘড়ি, যে ঘড়ি দেখে আজও খড়গপুর তার সময় মিলিয়ে নেয়। সেই ক্লক টাওয়ারের পাশেই জেগে উঠেছে যেন ৩০বছর আগের খড়গপুর ওয়ার্কশপ। ভারতের সেই বৃহত্তম রেল ওয়ার্কশপ যার ১৫০একর জায়গায় এক সময় কাজ করত ২৫ হাজার মানুষ! আজ সে সব ইতিহাস, মেরে কেটে এখন সাড়ে ৮ হাজার।
কিন্তু তবুও হঠাৎই যেন কোনও এক মন্ত্র বলে জেগে উঠেছে সেই কারখানা। দিন রাত হাতুড়ি হ্যাকস্রো আর ওয়েল্ডিং মেশিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ বলে দিচ্ছে আবারও বুঝি প্যাসেঞ্জার গাড়ির কোচ তৈরি হচ্ছে এখানে।
হ্যাঁ অনেকটাই ঠিক তবে এ যে সে কোচ নয় কোচের বদলে আজ এর নাম কেবিন। সারা ভারতে করোনা যুদ্ধে সামিল হয়েছে ভারতীয় রেল। আর করোনা সংক্রামিত রুগীদের জন্য বিশেষ কেবিন তৈরি করছে রেল। তারই একটা অংশ তৈরি করেছে দক্ষিন পূর্ব রেল। মোট ৩২৯টি কোচ কে আইশোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন কেবিনে রূপান্তরিত করছে যার মধ্যে খড়গপুর ডিভিশনই করছে সিংহভাগ ১৬০টি। এরপরই রয়েছে সাঁতরাগাছি ৮৯,হাতিয়া ৬০ এবং টাটানগর ২০টি। স্বভাবতই ঘুম ছুটেছে খড়পুরের।
আগামী ১০তারিখের মধ্যে শেষ করতে হবে তাই দিন রাত এক করে কাজ করছেন ইলেকট্রিক আর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিক আর কর্মী সমেত ১৫০থেকে ২০০জন। কাজের গতি বাড়াতে কাজের সময়ের বাইরে স্বেচ্ছাশ্রমও দিচ্ছেন অনেকেই। করোনা যুদ্ধে এও এক অবদান খড়গপুর কারখানার কর্মীদের। কারখানার চিফ ওয়ার্কশ ম্যানেজার এস.কে.চৌধুরী জানালেন, ”একটি বগির অভ্যন্তরে থাকা ৭টি কোচের একেকটিকে রূপান্তরিত করা হচ্ছে একেকটি আইশোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন কেবিনে। আর এভাবেই ১৬০টি কেবিন তৈরি করা হবে। প্রতিটি কেবিনে থাকছে একটি শয্যা। সাধারন কোচে যেখানে ২১০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে এখানে তা বাড়িয়ে ২৩০ করা হয়েছে যাতে প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর, নিম্বুলাইজার, ইত্যাদি মেশিন চালানো যায়। থাকছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা ও মনিটর অপারেটের ব্যবস্থা ইত্যাদি।”
প্রতিটি জানলা মশা নিরোধক জাল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে। একেকটি বগির চারটি টয়লেটের একটি শুধুই টয়লেট ও অন্য একটি বাথরুম করা হচ্ছে আর অন্যদুটিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে মেডিক্যাল স্টোর রুমে। এখানে ওষুধপত্র সহ নানা চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকছে। সাতটি কেবিনের একটি কেবিন থাকছে নার্স অথবা চিকিৎসকের জন্য। প্রতিটি বগি থাকছে অত্যন্ত উন্নত মানের হাইড্রোলিক শক্যাবজরভারের ওপর যাতে বিন্দুমাত্র ঝাঁকুনিও অনুভূত না হয়। আগামী ১১তারিখ কোচগুলিরকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে গার্ডেনরিচ, দক্ষিনপূর্ব রেলের সদর দপ্তরে তারপর ভারতীয় রেল ট্র্যাকের ওপর দিয়ে সেগুলি রওনা হবে করোনা যুদ্ধে। না, খড়গপুর রেল ওয়ার্কশপে তাই কোনও লকডাউন নেই।