নিজস্ব সংবাদদাতা: সেনাবাহিনীতে ১৮ বছর কাজ করার পর ২০১৪ সালে অবসর নিয়েছেন সুবেদার লক্ষ্মীনারায়ন আর তারপর কাজ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ‘কাউন্টার ইনসার্জি অ্যাণ্টি টেরোরিজম স্কুলে ট্রেনিংয়ের। সেনা থেকে প্যারাকমান্ডোর ট্রেনিংয়ের ইন্সট্রাক্টর লক্ষ্মীনারায়নের নিজের ডিউটি শেষ করেই শুরু হয় ‘দেশের ডিউটি।’ গত ২৩তারিখ থেকেই সকালে ২ঘন্টা আর বিকালে ২ঘন্টা এই ডিউটি করে চলেছেন তিনি। সঙ্গি নিজের বাইক, আর বাইকের মধ্যে থাকা একটা ছোট লাউড স্পিকার আর লাউড স্পিকার থেকে কখনও বেজে উঠছে বলিউডের নানা পাটেকরের ক্রান্তিবীরের ডায়ালগ আবার কখনও করোনা মোকাবিলায় মানু্ষের কি কি করা উচিৎ তার বক্তব্য।
সালুয়া, গোপালী পেরিয়ে খড়গপুর শহরের প্রেমবাজার, খরিদা, মালঞ্চ সহ শহরের অলিতে গলিতে সুবাদার লক্ষ্মীনারায়নের লাউড স্পিকারে বেজে ওঠে ‘আখির করোনাই জিৎ জায়েগা কিউঁকি তুম শো রহে হো…..’
লক্ষ্মীনারায়ন বলেন, ”এও এক যুদ্ধ যেখানে শত্রু করোনা ভাইরাস এক অদৃশ্য অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে যার নাম কোভিড-১৯। এই অস্ত্র লাইট মেশিন গান, কালাকিশিনভ, কিংবা মর্টার, গ্রেনেডের থেকেও শক্তিশালী। এ যুদ্ধে ইতালি স্পেন ফ্রান্স হেরে গেছে, আমেরিকারও যাই যাই অবস্থা। এখন লড়াই হচ্ছে ভারতের সঙ্গে আর এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।”
লক্ষ্মীনারায়ন আরও বলেন, ” আমাদের চিকিৎসক নার্স পুলিশ সেনাবাহিনী যেমন রাস্তায় নেমে লড়াই করছেন ঠিক তেমনই সাধারন নাগরিকদের লড়াই ঘরে থাকার আর সোশ্যাল ডিস্টেনসিং বজায় রাখার। অন্য যুদ্ধের মত এখানে শুধুই সেনা বা পুলিশ একা লড়ে দেশ বাঁচাতে পারবেনা। সমগ্র ভারতবাসীকে এই লড়াই লড়তে হবে। হয় আমরা জিতব নতুবা আমরা শেষ হয়ে যাব।”
খুব ভোর বেলা থেকে ট্রেনিং শুরু হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সর্বশ্রেষ্ঠ সশস্ত্র বাহিনী কাউন্টার ইনসার্জি ফোর্সের। মাওবাদী ও অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য লকডাউনের বাজারেও এদের ট্রেনিং বন্ধ নেই। সকাল ৭টায় সেই ট্রেনিং শেষ হওয়ার পরই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন লক্ষ্মীনারায়ন।
খড়গপুর শহরেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা তাঁর। তাই অলিতে গলিতে ঢুকে যান অনায়াসে। টানা দু’ঘন্টা চলে তাঁর প্রচার। এরপর বিকালে আবার দু’ঘন্টা। গোলবাজার, গেটবাজার, মথুরাকাটি, ছোট ট্যাংরা, ইন্দায় লক্ষ্মীনারায়নের স্পিকারে ক্রান্তিবীরের নানা পাটেকর বলে ওঠে, ‘ম্যায় কিউঁ তুমে বাঁচায় গা, তুমে তো মরনাই আতা হ্যায়…করোনাই জিৎ জায়গা..ঘুমো, তুম বে ফিকির ঘুমতে রহ…..’ মাথার টুপি খুলে ঘাম মুছে নেন লক্ষ্মীনারায়ন। তাঁকে তো ছুটতেই হবে! তিনি যে সৈনিক ! আর সৈনিকের কোনও অবসর নেই।