Homeএখন খবরভার্চুয়াল ক্লাশ বাতিল করল রাজ্য, শিক্ষা পোর্টালই ভরসা, সমালোচনায় শিক্ষা মহলের একাংশ

ভার্চুয়াল ক্লাশ বাতিল করল রাজ্য, শিক্ষা পোর্টালই ভরসা, সমালোচনায় শিক্ষা মহলের একাংশ

নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজ্যের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেনী অবধি ভার্চুয়াল ক্লাশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এল শিক্ষা দপ্তর। আর এর জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের সময়ের সামঞ্জস্যহীনতাকেই দায়ী করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । শিক্ষা দপ্তরের এই পিছিয়ে আসাকে দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় বলেই জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন গুলি।

কয়েকদিন আগেই এই ভার্চুয়াল ক্লাশ নেওয়ার ঘোষনা করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী আর সেই ঘোষনা আশ্বান্বিত করেছিল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কারন লকডাউনের কারনে শ্রেনীপাঠ বন্ধ থাকায় দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নবম থেকে দ্বাদশশ্রেনীর পড়ুয়ারা। এই পরিস্থিতি অন লাইন পাঠক্রম না চালু করতে পারলেও ‘ভার্চুয়াল ক্লাশ’ কিছুটা হলেও পড়ুয়াদের কিছুটা উপকারে আসত কিন্তু হঠাৎই শিক্ষাদপ্তরের পিছু হটা হতাশ করল তাঁদের। রাজ্য শিক্ষা বিভাগ ঠিক করেছিল দূরদর্শনে এবং ডিডি  বাংলা চ্যানেলে রাজ্য সরকারি, সরকারপোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের যে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া হবে। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে এই ক্লাশ শুরু হওয়ার কথা ছিল।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন,  ‘‘দূরদর্শনে  ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা লাভজনক হচ্ছে না। অভিভাবকরা যে সময় চেয়েছেন এবং শিক্ষকরা যে সময় চেয়েছেন, তার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে দূরদর্শনে সাত এপ্রিল, বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত যে স্লট নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম তা স্থগিত রাখলাম। অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র আমাদের কাছে বড় কথা। এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা সমগ্র ছাত্র সমাজের উপকারে লাগে।’’ দূরদর্শনে এই ক্লাস না হলেও বাংলার শিক্ষা পোর্টাল ও এডুকেশন হেল্প লাইনের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা বহাল থাকবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।

করোনার জন্য রাজ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এই অবস্থায় রাজ্যের আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ডের বেশ কিছু স্কুল অনলাইনে পড়াশোনা শুরু করেছে। শুক্রবার রাজ্য বোর্ডের স্কুলেও ‘ভার্চুয়াল’ ক্লাসের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করেন পার্থবাবু। সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা। কিন্তু শনিবার সিদ্ধান্ত বদলে  অনেকেই হতাশ। অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একাংশের মতে, করোনার জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা অসুবিধার মধ্যে পড়েছে। দূরদর্শনে ভার্চুয়াল ক্লাস হলে তারা উপকৃত হত।

যদিও শিক্ষা দপ্তরের এই পিছু হটার পেছনে শিক্ষা দপ্তরের অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেছেন শিক্ষা মহল। তাঁদের মতে পরিকাঠামো ইত্যাদি ঠিক না করেই শিক্ষামন্ত্রী এই ঘোষনা করেছিলেন যার অনিবার্য পরিনতি এই পিছু হটা। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জরুরি এবং সঠিক ছিল কিন্তু ২৪ঘন্টার মধ্যে পিছিয়ে আসা এবং পিছিয়ে আসার পেছনে যুক্তিটা অত্যন্ত শিশুসুলভ।  শিক্ষামন্ত্রী না’হয় আরও দুদিন সময় নিতেন। সবকিছু ঠিক করে তারপর ঘোষনা করতেন। তা না করে উনি কেনই বা দুম করে ঘোষনা করলেন আর কেনই বা পিছিয়ে এলেন সেটাই বোধগম্য হলনা। আর এরপর এটা আদৌ হবে কিনা তারও কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দিলেননা। এতে পড়ুয়াদের যথেষ্ট ভুগতে হবে।”

অন্যদিকে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ” শিক্ষা দপ্তরের আমলা নির্ভরতাই এই সিদ্ধান্তহীনতার কারন। যেখানে সারা রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর উচিৎ ছিল শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই শিক্ষক সংগঠনগুলি সরকারের পাশে দাঁড়াত। আসলে উনি ঠিকই করে উঠতে পারেননি কারা ক্লাশ নেবেন, কখন ক্লাশ নেবেন, কোন বিষয়ে ক্লাশ হবে , সব বিষয়ে সমান গুরুত্ব আরোপ করা হবে কিনা ইত্যাদি। তা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন আর যখন দেখলেন সম্ভব হচ্ছেনা তখন দায়টা চাপিয়ে দিলেন শিক্ষক শিক্ষিকা আর অভিভাবকদের ওপর। উনি সবার সংগে আলোচনা করে করলে পিছিয়ে আসতে হতনা।” পাইন আরও বলেন, ”মন্ত্রী একই ভুল করেছেন অষ্টম শ্রেনী অবধি কাউকে না আটকানোর তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে। এটা উনি করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ড গুলিকে দেখে যাদের শিক্ষা বর্ষণ প্রায় শেষ। অন্যদিকে রাজ্যর শিক্ষাবর্ষ শুরুর মুখে। এখানে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর তিনটি সেমিস্টারের পরীক্ষার কি হবে তাহলে?”

RELATED ARTICLES

Most Popular