নিজস্ব সংবাদদাতা: গত ২৪ তারিখ থেকে বলবৎ হওয়া লকডাউনের দিন থেকে ১২ দিনের মাথায় শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৬৯জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ আর এটাই হল একদিনে গ্রেপ্তার করা পুলিশের এযাবৎ কালের সেরা নজির। পাশাপাশি এদিন বাইক ও স্কুটি সহ মোট ১৬টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে কয়েকজন মহিলাকে রেহাই দেওয়া হলেও আগামী দিনে যে তাঁদের রেয়াত করা হবেনা তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রবিবার থেকে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নামা মহিলাদের সবক শেখাতে রাস্তায় নামানো হচ্ছে মহিলা পুলিশকেও। এমনটাই জানা গেছে পুলিশের তরফে।
এদিনের বড়সড় অপারেশনটি হয়েছে বেলার দিকে মেদিনীপুর শহরে আর সন্ধ্যায় খড়গপুর শহরে। সন্ধ্যায় শুধু খড়গপুর থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫জনকে। বাদ বাকী গ্রেপ্তারের সিংহভাগই হয়েছে মেদিনীপুর শহরের এল.আই.সি মোড় ও সংলগ্ন এলাকা থেকে। পুলিশ সুত্রে জানানো হয়েছে, ঢের হয়েছে মানুষকে বাবা বাছা করে বোঝানোর। গোলাপ ফুল , মালা থেকে কান ধরে ওঠ বোস করেও বাগ মানেনি জনতার একটা বেয়াদব অংশ। তাই গ্রেপ্তারই একমাত্র পথ আর এখন থেকে ধরলেই গ্রেপ্তার করা হবে। কোনও রাজনৈতিক নেতা বা গন্যমান্য ব্যক্তির সুপারিশও আর মানা হবেনা।
জানা গেছে করানোর বিরুদ্ধে তৃতীয় স্তরে রয়েছে দেশ। এই স্তর আরও মারাত্মক, এই স্তর গোষ্টি সংক্রমনের। অর্থাৎ এতদিন খবর আসত অমুক জায়গায় একজন আক্রান্ত তমুক জায়গায় দু’জন। এখন খবর আসবে এক সাথে ৫ থেকে ৫০ জন আক্রান্ত হওয়ার। কারন যে মানুষটি কোনও এলাকায় প্রথম সংক্রামিত হয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকে গোটা একটা পরিবার বা গোষ্ঠি সংক্রামিত হয়ে পড়বেন। যেমনটা হচ্ছে ইতালি , স্পেনে, আমেরিকায়। মৃত্যুর সংখ্যা সেখানেও এখন হাজার হাজার ছাড়িয়ে লাখের সিঁড়ি ছুঁতে চলেছে।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভারত দ্বিতীয় স্তর পেরিয়ে এসেছে। তৃতীয় স্তরে করোনা ভাইরাসে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৮২ ছড়িয়েছে । মৃতের সংখ্যাও বাড়তে বাড়তে ৮৬ ছুঁয়ে । দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদের কতটা জয় হয়েছে নাকি আমরা করোনা যুদ্ধে পরাজিত তা নির্ধারন করবে এই তৃতীয় পর্যায়ের ফলাফল। আর সে কারনেই এবার আরও কঠোর কেন্দ্র সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘরবন্দী দশার ন’দিন কাটতে না কাটতেই আরো কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যগুলোকে।
লকডাউন যারা অমান্য করবে কিংবা সরকারি কর্মীদের বাধা দেবে তাদের এক থেকে দু’বছরের জন্য জেলে পাঠাতে হবে। একই ভাবে মানু্ষের লকডাউন না মানার প্রবনতায়া উষ্মা প্রকাশ করেছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর মনোভাব নিয়েছে রাজ্য পুলিশ।
এদিন সকাল থেকেই মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিয়েছে পুলিশ। এরপরই বেলা বাড়তে জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে ক্ষুদিরাম মোড়ের কাছে নাকা চেকিং শুরু করে পুলিশ। সেখানেই একে একে ধরা পড়েন নানা অজুহাতে বাইরে বের হওয়া নারী পুরুষ। বাইক আর স্কুটির মেলা বসে যায় নিমেষে। এখানেই দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক জানান, সব চেয়ে আশ্চর্য্য হয়েছি মহিলাদের প্রবনতা দেখে। যাঁকে শুক্রবারই বাইরে বেরুনোর পর আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম শনিবার আবার তিনি বেরিয়েছেন। এমনকি শনিবার সকালে সিপাই বাজারে যে মহিলাকে আমরা ওয়ার্নিং দিয়েছি দুপুরে তিনি এল.আই.সি মোড়ে ফের বেরিয়েছেন। ফলে আমাদের ভাবতেই হচ্ছে। মহিলা বলে নিয়ম ভাঙার সুবিধা কাউকে দেওয়া যায়না। রবিবার থেকে তাই মহিলা পুলিশ কর্মীরাও টহল দেবেন। প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে লকডাউন মানতে নারাজ মহিলাদের।
এদিন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআরও করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন না মানায়। মহামারী প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে এবার ফুল ফ্লেজেড ব্যাটিংয়ে নামল পুলিশ। লক্ষ্য সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে যাওয়া। পুলিশের এই ভূমিকায় আশার আলো দেখছেন করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা মানুষ।