Homeএখন খবরহলদিয়ার নিজামুদ্দিন ফেরৎ ব্যক্তির কোনও উপসর্গ ছাড়াই কোভিড-১৯ পজিটিভ,করোনা আতঙ্কে শুনশান বন্দর,...

হলদিয়ার নিজামুদ্দিন ফেরৎ ব্যক্তির কোনও উপসর্গ ছাড়াই কোভিড-১৯ পজিটিভ,করোনা আতঙ্কে শুনশান বন্দর, হলদিয়ায় ২ সমেত পূর্ব মেদিনীপুরে করোনা আক্রান্ত ৬ জন

নিজস্ব সংবাদদাতা: কোনও উপসর্গই ছিলনা, না জ্বর, না সর্দি কাশি। দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদে তাবলিগী জামাত ধর্ম সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জানার পরই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন তাকে ৩১মার্চ থেকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেছিল। ২মার্চ তাঁর সোয়াব পাঠানো হয় কলকাতায়। রাত ১০টা নাগাদ বেলেঘাটা আইডি থেকে খবর আসে তাঁর করোনা পজিটিভ। রাতেই তাঁকে বেলেঘাটায় স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর পরিবারের ৫জনকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই শুক্রবার সকাল থেকে হলদিয়া শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়। সিআইএসএফ বন্দর ফাঁকা করছে।

নিজামুদ্দিন ফেরত ওই ব্যক্তির ওই ব্যক্তি হলদিয়া বন্দরের ১৩নম্বর জেনারেল কার্গো বার্থ বা জিসি বার্থে একটি বেসরকারি ক্রেন অপারেটিং সংস্থায় সুপার ভাইজারের কাজ করেন। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি ২৪মার্চ দিল্লি থেকে ফেরার পর বন্দরে কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে। এখন বন্দরের ওই বার্থের সিসিটিভি ক্যামেরা চেকিং করে ওই ব্যক্তির গতিবিধি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার অমল দত্ত বলেন, ওই ব্যক্তি বন্দরে দিল্লি থেকে ফেরার পর বন্দরে এসেছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তা দেখা হচ্ছে। সবাইকে বলা হচ্ছে, যাঁরা সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের জানাতে বলা হয়েছে। সবাই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার উপর নজর রাখা হচ্ছে।

এদিকে এই ঘটনায় উদ্বেগ সারা বন্দর তথা শিল্প শহরে কারন হলদিয়ায় এটা দ্বিতীয় করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। এর আগে হলদিয়ার দুর্গাচকে এক হাতুড়ে ডাক্তারের করোনা ধরা পড়ায় শিল্পশহরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। ৬৯ বছর বয়স্ক ওই ডাক্তার গত ২৮ মার্চ রাত্রি ৯টা ৪৫মিনিট নাগাদ হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন। তারপর তাঁকে তমলুকে রেফার করা হয়। ওই ব্যক্তির পরিবারের লোকজন তাঁকে তমলুকের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। সেখানে কলকাতার এক চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর ক্রনিক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা চলছিল। পরে অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। করোনা সন্দেহে তাঁর লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জানা যায় ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে। বিকেল নাগাদ এই খবর জানাজানি হওয়ার পর শিল্পশহরে চাঞ্চল্য ছড়ায়।

পূর্ব মেদিনীপুরের চিফ মেডিকেল অফিসার নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, হলদিয়ার দুর্গাচক টাউনের এক বাসিন্দার করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। হলদিয়ার প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। ওই ব্যক্তির একটি ওষুধ দোকান রয়েছে। তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন এমন ১০জনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দুর্গাচক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি হলদিয়ার একটি বেসরকারি শিল্প সংস্থায় চিকিৎসকের সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে অবসর নেন। তাঁর বাড়ি দুর্গচক টাউনের ‘বি’ ব্লকে। কিছুটা দূরে ‘ডি’ ব্লকে তাঁর একটি ছোট ওষুধ দোকান ও ডিসপেনসারি রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৬মাস ধরে তিনি নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তমলুকে ভর্তি করতে হত। কিছুদিন আগে তিনি চেন্নাই গিয়েছিলেন। গত ১৩মার্চ তিনি চেন্নাই থেকে হলদিয়া ফেরেন।

কীভাবে করোনা সংক্রমণ ঘটল তা চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের। তবে তাঁর ট্রাভেল হিস্ট্রি খুঁজতে গিয়ে এই তথ্য মিলেছে। ওই সময়ে চেন্নাইতে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। ট্রেনে আসার সময়ে কোনভাবে সংক্রমণ ঘটেছে কিনা তা খুঁজে দেখার চেষ্টা হচ্ছে। তবে হলদিয়া শিল্পশহরের জনবহুল এলাকায় এভাবে করোনা সংক্রমণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুরপ্রশাসন। এদিন এই বিষয়টি জানার পরই চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার আদক বৈঠক করেন। ওই ব্যক্তিকে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ট্রমা অ্যাম্বুলেন্সে করে তমলুক থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার পুরসভায় খবর আসার পরই ওই ট্রমা অ্যাম্বুলেন্সকে সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইড দিয়ে স্যানিটাইজ করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার ও সহকারিকেও আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। হলদিয়ায় করোনা ধরা পড়ার পর এখন তটস্থ শিল্পশহর। এদিকে এগরার বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত চার করোনা আক্রান্ত সহ হলদিয়ার এই দুটি ঘটনা মিলিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬।

RELATED ARTICLES

Most Popular