নিজস্ব সংবাদদাতা: আস্ত একটা গ্রাম চলে গেছে কোয়ারেন্টাইনে। হ্যাঁ , হোম কোয়ারেন্টাইনের বদলে বলা যেতে পারে ভিলেজ কোয়ারেন্টাইন। সোমবার রাতেই ‘নাইসেড’ জানিয়ে দিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নিজামপুর গ্রামের মুম্বাই ফেরৎ ৩০ বছর বয়সী যুবক কোভিড-১৯ পজিটিভ অর্থাৎ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত। মঙ্গলবারই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স করে যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় বেলেঘাটা আই.ডি হাসপাতালে।ওই দিনই যুবকের পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় সরবেড়িয়া হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই কোয়ারেন্টাইনে তাঁরা। তাঁদের প্রত্যেকেরই নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য আর তারপরই গোটা গ্রাম এখন কোয়ারেন্টাইনে।
কী ভাবে পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তর কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে গ্রামটিকে? জানা গেছে দাসপুর ১পঞ্চায়েত সমিতির নন্দনপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ওই নিজামপুর গ্রামকে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করে রেখেছে আদি কাঁসাই নদীর একটি ধারা স্থানীয় ভাষায় যা দুর্বাচাটি নদী বা খাল বলে পরিচিত। এই ভাগের ফলে নিজামপুর পুর্ব ও পশ্চিম দুটি পাড়ায় বিভক্ত। পুর্ব পাড়ায় ৮০ ও পশ্চিম পাড়ায় ১২০টি পরিবারের বাস। আক্রান্ত যুবকের বাড়ি পশ্চিম পাড়ায়। এই দুটি পাড়ার সংগে এবং বাইরের দুনিয়ার সংগে পশ্চিম পাড়ার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ওই দুর্বাচটির ওপর গ্রামবাসীদের তৈরি করা চারটি বাঁশের সেতু। এই চারটি সেতুকেই কেটে পশ্চিম পাড়াকে বিছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম পাড়ার সংগে অন্যদিকে সংযুক্ত রাস্তা গুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম পাড়ার অভ্যন্তরে আক্রান্ত যুবকের নিজের এবং জেঠুর দুটি বাড়ি থেকে ৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে সরবেড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানোর পর বাড়ি দুটিতে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ওই বাড়ি দুটির সংগে গ্রামের অভ্যন্তরে যোগাযোগের রাস্তা সিল করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের মধ্যেই রয়েছে একটি পুলিশ পিকেট। ১২০টি পরিবারের বাকি সদস্যদের বাড়ির বাইরে বের হওয়া পুরোপুরি বারন। গ্রামের রাস্তায় পুলিশের নজরদারি। বাইরে থেকে গ্রামে কারও প্রবেশ ও গ্রামের বাইরে কারও বেরুনো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। গ্রামের পরিবারগুলির যা কিছু প্রয়োজন পুলিশকে বলতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের সংগে কথা বলে গ্রামবাসীদের প্রয়োজন মেটাবে।
পুলিশ জানিয়েছে খুবই আপৎকালীন অবস্থা ছাড়া গ্রামের ভেতরে বা বাইরে কেউই যাতায়ত করতে পারবেনা। আপৎকালীন অবস্থাগুলি হল , গুরুতর অসুস্থতা, প্রসবকালীন অবস্থা, পুলিশি ও স্বাস্থ্য পরিসেবা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে কারা কোথায় কতক্ষন যাচ্ছে আসছে সমস্ত পুলিশকে জানাতে হবে। গ্রামের প্রতিটি সদস্যর জ্বর , সর্দি, কাশি ইত্যাদির ওপর স্বাস্থ্য দপ্তর নজর রাখবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সব মিলিয়ে এভাবেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ওই গ্রাম।
এদিকে ২২তারিখ মুম্বাই থেকে ফিরে আসা ওই যুবক যিনি ২৮ তারিখ মেদিনীপুর মেডিক্যাল ও ৩১তারিখ বেলেঘাটা আই.ডিতে স্থানান্তরিত হয়ে করোনা চিকিৎসায় রয়েছেন তাঁরই সমসাময়িক দাসপুর আর ঘাটাল এলাকায় ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন আরও প্রায় ১৫ হাজার সোনার কারিগর। স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শে এরা বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে। আশংকা জাগিয়ে এঁদের মধ্যেই মঙ্গলবার ফের দুজনকে পাঠানো হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এঁদেরও ঠিক তেমনই উপসর্গ দেখা দিয়েছিল তবে দুজনেরই কোভিড ১৯ নেগেটিভ বা করোনা সংক্রমণ নেই বলেই জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা।