নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৪ ঘন্টা আগে যখন ব্যাঙ্কগুলি ঋন গ্রহিতাদের সুদ কামাচ্ছিল কিংবা ইএমআই পরিশোধ করা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার কথা ঘোষনা করছিল তখন নিশ্চিতভাবে অনেকেই আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন আর মনে মনে করোনার একটা ভাল দিক খুঁজে পেয়েছিলেন। আসলে এর উল্টোদিকে অনেকেই তাকাননি, ভাবতেই পারেননি কি ভয়ানক বিপরীত প্রতিক্রিয়া অপেক্ষা করছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেই প্রতিক্রিয়া ফিরে এসে সিঁদ কাটল প্রধানত গরীব ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে। বড় ধাক্কা খেলেন তাঁরা।
বুধবার থেকেই শুরু নয়া অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য স্বল্প সঞ্চয় ও পিপিএফের সুদ কমাল কেন্দ্র। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC) – এ সুদ বছরে ৭.৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হল ৬.৮ শতাংশ। কিষাণ বিকাশ পত্রে সুদ ৭.৬ শতাংশ থেকে কমে হল ৬.৯ শতাংশ। সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট স্কিমে সুদ ৮.৪ থেকে কমে হয়েছে ৭.৬ শতাংশ। পিপিএফের সুদ ৭.৯ শতাংশ থেকে কমে করা হল ৭.১ শতাংশ।
মাসিক আয় প্রকল্পে (MIA) সুদ ৭.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬.৬ শতাংশ। এমনকী প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সিনিয়র সিটিজেনস সেভিংস স্কিমে সুদ ৮.৬ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। বহু অবসরপ্রাপ্ত স্বল্প সঞ্চয়ে জমানো টাকার সুদে জীবন চালান। আর্থিক বছরের শেষ দিন তথা মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা খুবই আতান্তরে। সুদের নয়া হারে দেখা যাচ্ছে পিপিএফ-সহ সমস্ত প্রকল্পে সুদ বছরে ০.৮ শতাংশ থেকে ১.৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। এক ধাক্কায় এতটা সুদ কমে যাওয়া একেবারেই বেনজির ঘটনা।
নয়া সুদের হার আজ ১ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হবে বলে অর্থমন্ত্রক তার বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও ডাকঘরে যাঁরা পিপিএফ অ্যাকাউন্টে টাকা সঞ্চয় করেন, তাঁদের আজই সুদের টাকা জমা পড়ার কথা। পিপিএফে সুদ কমছে ০.৮ শতাংশ। ফলে অর্থ বছরের প্রথম দিনেই পিপিএফে সঞ্চয়কারীদের আয়ে বিশাল ধাক্কা। কয়েকদিন আগেই রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার অনেকটা কমিয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোর পরেই ব্যাংকগুলোও সুদের হার কমাতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ডাকঘরের সঞ্চয়ে যে সুদের হার কমবে তা একরকম নিশ্চিত ছিল। তবে ডাকঘরের সেভিংস ডিপোজিটে সুদের হার ৪ শতাংশই থাকছে। মেয়াদি আমানতগুলোয় ব্যাংকের হারেই সুদ কমছে। কিষাণ বিকাশ পত্র ম্যাচিউরিটির সময় ১১৩ মাস থেকে বাড়িয়ে ১২৪ মাস হবে বলেও অর্থমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এরফলে গভীর অর্থসংকটের মধ্যেই ঢুকে পড়তে চলেছেন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের আমানতকারীরা। অনেকেরই এই মাসিক সুদের ওপর সংসার চলে। করোনার ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে অনেকটাই তার ওপর এই ধাক্কা গভীর সংকটের মুখে ফেলে দিল স্বল্প সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের।