নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী শনিবার ভারত করোনার স্টেজ থ্রি-তে পৌঁছাবে। স্টেজ থ্রি র অর্থ গোষ্টি সংক্রমন। যাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন তাঁরা যে বাস ট্রেন হাটে বাজারে ছিলেন সেখান থেকেই এবার গুচ্ছ গুচ্ছ সংক্রমনের খবর আসবে। ভয়ানক সেই দিন যে দিনের কথা ভেবে হাজার হাজার কোয়ারেন্টাইন শয্যার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত করছেন কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি। সেই ভয়াবহ শনিবারই লকডাউন কার্যতঃ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল খোদ রাজধানী দিল্লির গা ছুঁয়ে থাকা উত্তরপ্রদেশের আনন্দ বিহারে।
আর শনিবারই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশিকা মাথায় উঠল আর বেআব্রু হয়ে গেল উত্তর প্রদেশ পুলিশ আর প্রশাসনের অপদার্থতা।
পাঁচদিন লকডাউনের পরে শনিবার সকাল থেকে দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনালে উপচে পড়েছে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক-মজুরদের ভিড়। বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে আসা শ্রমিক। লকডাউনের জেরে দিল্লিতে আটকে পড়া এই দিনমজুরদের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য ১০০০ হাজার বাসের ব্যবস্থা করেছে যোগী সরকার। কিন্তু মাত্র ১৫টি বাস যার একেকটিতে বড়জোর ৭৫ জন যাত্রী ধরে আর মানুষ হাজার হাজার। তারপরেই দেখা গেছে এই ঠাসাঠাসি, গাদাগাদি ভিড়।
শুক্রবার মাঝরাত থেকেই উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে বাস ছাড়া শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরের পর থেকেই ২৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দেখা গেছে লম্বা লাইন। হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতেও দেখা গেছে শ্রমিক, মজুরদের। “দিল্লির হিংসার সময় থেকেই আমরা আটকে রয়েছি। রোজগার প্রায় বন্ধ। হোলিতেও রোজগার কিছু হয়নি। এর পরে করোনাভাইরাসের জন্য লকডাউন। আমরা বাড়ি ফিরতে চাই,” বলছেন শ্রমিকরা। বাস্তবিকই তাঁদের না খেতে পেয়ে মরার শংকা।
করোনার সংক্রমণ যাতে সামাজিক স্তরে না ছড়ায় সেই কারণেই ২১ দিনের লকডাউন চলছে দেশজুড়ে। অন্যান্য রাজ্যের মতো দিল্লিতেও তার প্রভাব পড়েছে। লকডাউনের ফলে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও বাংলা থেকে দিল্লিতে কাজের খোঁজে আসা বহু দিনমজুরের রোজগারে টান পড়েছে। অনেকেই বলেছেন, রাজধানীর হিংসার সময় থেকেই রুজিরুটিতে টান চলছে, তার ওপর করোনা আতঙ্কের জেরে প্রতিদিনের রোজগার প্রায় বন্ধ। কাজ হারিয়ে দিল্লি ছে়ড়ে নিজের রাজ্যের দিকে পা বাড়িয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক।
এক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশ সরকারের উচিৎ ছিল শ্রমিকরা যে এলাকায় ছিল সেই এলাকার স্কুল কলেজে তাঁদের রেখে খাবার ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজন মনে হলে সেখান থেকেই বাসে করে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তা না করে সবাই আনন্দ বিহারে আসতে বলে কার্যতঃ বিপর্যয়ের বাঁধ ভেঙে দিল সরকারই। এরপর কী হবে কেউ জানেনা । যদি এখানে দু’একজন সংক্রামিত হয়ে যায় তবে তা ছড়াবে কাতারে কাতারে।