নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর মেদিনীপুরের সংযোগকারি কাঁসাইনদীর ওপর বীরেন্দ্র সেতু বা চলতি ভাষায় মোহনপুর ব্রীজের তলায় যে ৯জনের বাস তা কে জানত? করোনা আর লকডাউন না হলে বোধহয় জানাও যেতনা যে ওই সেতুর তলায় ছিন্নমূল দুটি পরিবারের ৯জনের বাস। না, তারপরও জানা যেতনা যদি মেদিনীপুর শহরের অশোক নগরের বাসিন্দা রাজকুমার ওরফে রাজু তাঁর স্ত্রীর হাতে রান্না করা খাবার আগামী ২১দিন তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে বসে না থাকতেন। হ্যাঁ , ঠিকই শুনেছেন আগামী ২১দিন দু’বেলা ওই দুটি পরিবারের ৯ জনের অন্ন পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। বুধবার দুপুরে বাইকে করে তাঁদের কাছে ডিমের ঝোল আর ভাত পৌঁছে দিয়েছেন আর রাতের জন্য মুড়ি আর বাতাসা। রাজু জানিয়েছেন, আগামী ২০দিন এভাবেই চলবে।
রাজু মানে রাজকুমার বেরা। দক্ষিন ২৪পরগনার একটি হাইস্কুলের শিক্ষক রাজকুমার মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক। মেদিনীপুর শহরে মফস্বল থেকে পড়তে আসা কয়েকজন ছাত্রকে একসময় নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠন এক রীতিমত যুবক। সদস্যদের অনেকেই চাকরি পেয়ে গেছেন কিন্তু ছাড়েননি সেবার ব্রত। রাজু তাঁদেরই একজন। সংগঠনের আরেক সদস্য কৌশিক কঁচ একটা সমীক্ষা সেরে ফেলেছিলেন আগেই আর সেই মত সেতুর তলায় এই দুটি পরিবারের ২১দিনের দায়িত্ব নিয়েছেন রাজু আর তাঁর স্ত্রী নবনীতা।
বুধবার দুপুরে সুব্রত দে নামে এক তরুনকে নিয়ে রাজু পৌঁছে যান কাঁসাই সেতুর তলায়। ছিন্নমূল এক অশক্ত বৃদ্ধা সহ বাকিদের জন্য তুলে দিয়েছেন দুপুরের অন্ন ও রাতের মুড়ি বাতাসা। রাজু জানিয়েছেন, ”এভাবেই চলবে আপাতত। যদি প্রশাসন এঁদের দায়িত্ব নিয়ে নেন ভাল তাহলে আমরা অন্য কোথাও অন্য কোনও পরিবারের দায়িত্ব নেব। করোনার সঙ্গে লড়াই করতে মানু্ষের খেতে পারাটাও জরুরি। এভাবে যদি আরও কেউ এগিয়ে আসেন তবে বেঁচে যাবে আরও পরিবার।”
রাজকুমারের স্ত্রী নবনীতা জানিয়েছেন, ” এই মহা সংকটে শুধুই নিজের ঘর কন্যা করার সময় নয়, তারজন্য পড়ে আছে সারাজীবন। এখন অসহায় মানু্ষের পাশে দাঁড়ানোর। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি নিরন্ন অভুক্ত মানুষেরা পাবেন কোথা থেকে যদি তাঁরা খেতেই না পান। আমরা সেই টুকুই করছি মাত্র।”
জেলা তথা রাজ্যের অন্যতম সমাজসেবী ঝর্না আচার্য্য জানিয়েছেন, লকডাউন ঘোষনার পর অত্যন্ত উদ্বেগে ছিলাম এই সব মানুষদের জন্য । রাজুর কাছে সেই উদ্বেগ প্রকাশ করতেই ও দায়িত্ব নিয়ে নেয় । রাজু আর নবনীতা যা করছেন তাঁর তুলনা হয়না। রাজু আরও যেটা করছেন সেটা হল নিজের বাড়িতেই একটি ছোট ইউনিট গড়ে সাবান আর স্যানিটাইজ তৈরি করে দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরাও বলছি এমন কোনও নিরন্ন অভুক্ত ভবঘুরে কিংবা দরিদ্র পরিবারের সন্ধান থাকলে আমাদের জানান।আমরা পৌঁছে যাব তাঁদের কাছে।”
লকডাউন ঘোষনার পর সব চেয়ে সংকটে সমাজের এই দুর্বলতর অংশ। পুলিশ বা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও সব সময় এঁদের খোঁজ নাও পেতে পারে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সাধারন মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে এঁদের জন্য। আগামী কয়েকদিনের জন্য আলু, চাল আর ডিম মজুত করে রেখেছেন রাজকুমার আর নবনীতা। তৈরি করেছেন বেশ কিছু সাবানও। কারও কাছে সেরকম মানুষের সন্ধান থাকলে অশোক নগরে রাজু আর নবনীতার বাড়িতে খবর দিতে পারেন। ‘ দ্য খড়গপুর পোস্ট’ রাজকুমার আর নবনীতার জন্য বিনম্র অভিন্দন রাখল।