নিজস্ব সংবাদদাতা: বাড়ি ভাঙা নয়, ফসল নষ্ট নয়, এমনকি হাতির হামলায় কারও প্রাণ যাওয়ার দাবি নিয়ে নয় বনদপ্তরের কাছে সাড়ে ১৩হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন জঙ্গলমহলের এক গৃহবধূ। তাঁর দাবি হাতির পাল খেয়ে নিয়েছে নগদ ওই পরিমাণ টাকা যা কিনা তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন গমের বস্তায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল অধ্যুষিত গুড়গুড়িপাল থানার শালিকা গ্রামের গৃহবধূ আশালতা দলুইয়ের ক্ষতিপূরণ চেয়ে এ হেন অভিযোগ পেয়ে বন দপ্তরের কর্তারা এই অভিযোগ পেয়ে রীতিমতো বিড়ম্বনায়।
বনদপ্তরের কর্তারা বলছেন, হাতির আক্রমনে কোনও মানুষের মৃত্যু হলে, ঘর বা চাষের ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হাতি যদি নগদ টাকা খেয়ে ফেলে তাহলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া কীভাবে সম্ভব? কীভাবে প্রমাণ করা হবে ক্ষতি? এই বিষয়টিকে ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা গুড়গুড়িপাল থানা এলাকা জুড়ে। যদিও এই অভিযোগে অনড় টাকার মালিক তথা দাবিদার আশালতা দলুই। তাঁর দাবি, মদ্যপ স্বামীর হাত থেকে রক্ষা পেতে গমের বস্তার মধ্যে ১৩,৫০০ টাকা লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। সেই টাকাই খেয়ে গিয়েছে হাতির পাল। যে হাতির পালটি কিনা দলমা থেকে এসে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গুড়গুড়িপাল থানা তথা চাঁদড়া রেঞ্জ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে গোটা ছ’য়েক হাতির একটি দল গোপগড় বিটের পাঞ্জাশোল জঙ্গল ছেড়ে শালিকা গ্রামে প্রবেশ করে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মধ্যেই বাদল দলুইয়ের বাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, সেই বাড়িরই দেওয়াল ভেঙে মজুত করে রাখা রেশনের চাল ও গমের বস্তা শুঁড় দিয়ে বের করে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে খেয়ে সবকিছু সাবাড় করে দেয় হাতির দল। আশালতার দাবি, তাঁর স্বামী বাদল দলুই প্রচন্ড চুল্লু আসক্ত। মদের জন্য বাড়ির ঘটি বাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়। আগে প্রায়ই আশালতার এখানে ওখানে জমিয়ে রাখা টাকা খুঁজে পেতে মদ খেয়ে সাবাড় করে দিত। সেই জন্যই বাক্স প্যাঁটরার বদলে টাকা রেখেছিলেন গমের বস্তায় লুকিয়ে। ভেবেছিলেন গম বিক্রি করার আগেই বের করে নেবেন টাকা কিন্তু কে জানত হাতি খেয়ে নেবে টাকা?
আশালতা জানিয়েছেন, এখানে ওখানে কাজ করে, হাঁস মুরগি ডিম ইত্যাদি বেচে তিল তিল করে জমিয়েছি টাকা। ছেলেপুলে নিয়ে সংসার। রোগ বিসুখ ইত্যাদি নানা খরচ লেগেই থাকে। মিনসের এমন অবস্থা পেটে কিল মারলে এক পয়সা বেরুবেনা উল্টে আমার জমানো টাকায় মদ খাবে। টাকার গন্ধ পেলেই টাকা চেয়ে বাড়ি মাত করবে। অশান্তি লেগেই থাকে। সেই কারণে জমানো টাকা লুকিয়ে রেখেছিলাম গমের বস্তায়। আর দেড় হাজার টাকা হলেই পুরো টাকা পোষ্ট অফিস বা ব্যাঙ্কে রেখে দিতাম কিন্তু তার আগেই হাতি খেয়ে নিয়েছে টাকা। আমি ১৫হাজার বা ২০হাজার টাকা বলতে পারতাম কিন্তু বলিনি। আমার যেটা হাতি খেয়েছে সেটাই বলেছি। এখন ওই টাকা আমার ফেরৎ চাই-ই চাই।”
তবে এই সমস্যার সমাধান সূত্র বনদপ্তরের কর্তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। সরকারের নিয়মে হাতির টাকা খেয়ে নেওয়ার জন্য কোনও ক্ষতিপূরণের বিধান নেই। এদিকে ঘটনার খবর শুনে হাসছেন বাদল। ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি বলে বেড়াচ্ছেন, “হাতি টাকা খেয়ে কী স্বাদ পেল জানা নেই কিন্তু ওই টাকা লুকিয়ে রেখে কী লাভ হল? না ভোগ করতে পারলি তোরা না আমি! স্বামীর হাত থেকে টাকা বাঁচাতে গিয়ে টাকা গেল হাতির পেটে।”