নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১১ সালে তৃনমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর ধর্মতলায় ২১শে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চে পাগলু ড্যান্স দেখেছিল বাংলা। হতভম্ব তৃনমূলের শহিদ পরিবারের হয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, শহিদ দিবসে সেই ফিল্মি নাচের কোনও প্রাসঙ্গিকতা ছিল কিনা? তার ১০বছর পরে ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল বাসী দেখলেন তৃণমূলের সেই শহিদ দিবসেই জোড়া পাঁঠার বলি দিয়ে ভোজ সভা। সাথে হলো ফিস্ট ও ডিজে’র তালে উদ্দাম নাচ। আর এই পুরো বিষয়টির নেতৃত্ব দিলেন ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক তথা এই বিধানসভায় ঘাটালের পরাজিত তৃনমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলাই।
এদিন শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে ঘাটাল তৃনমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের মেজাজই বদলে দিয়েছেন শঙ্কর বাবু। ডিজে বাজিয়ে, মালা পরানো জোড়া পাঁঠা হাতে তৃনমূল কর্মীরা চলেছিলেন, ‘মা মাটি মানুষ জিন্দাবাদ, মমতা ব্যানার্জী জিন্দাবাদ, তৃণমূল জিন্দাবাদ এবং শঙ্কর দোলই জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে দিতে ঘাটাল শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দুরে বলরামপুর আনন্দপুর মৌজায়।
ওখানেই স্থানীয় মানুষের দাবি অনুযায়ী ৪০০বছরের প্রাচীন কালি মন্দিরের সামনে দুই পাঁঠাকে বলি দেওয়ার সময় নিজেই ঢাক বাজান শঙ্কর বাবু। ওখানেই নিজে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক ২১শে জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত ১৩ জন শহিদকে স্মরণ করার পাশাপাশি তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানান তিনি। এরপরই বলির দানের সময় নিজের কাঁধে ঢাক তুলে নিয়ে বাজালেন এবং নাচলেন। আর পরে সেই পাঁঠার মাংস দিয়ে হলো কবজি ডুবিয়ে ভূরিভোজ।
প্রশ্ন হল আজকের দিনে এই অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা কী? শঙ্করবাবু জানিয়েছেন শহিদদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি নেত্রী ক্ষমতায় হ্যাট্রিক করার জন্য এই ব্যাবস্থা এলাকার তৃণমূল কর্মীরাই করেছে এবং তার জন্য তিনি গর্বিত। এটা তো ঠিকই তৃনমূল নেত্রীর তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসা এবং বিজেপির মত শক্তিকে পরাস্ত করে ক্ষমতায় আসার জন্য তৃনমূল কর্মীরা আনন্দ করতেই পারেন। কিন্তু তা’বলে আজকের দিনে, দলের ঘোষিত শহিদ দিবসেই নাচ, গান, কব্জি ডুবিয়ে ফিস্ট এরজন্য আরেকটি দিন বেছে নেওয়া যেতনা? কী বার্তা গেল তাঁদেরই ঘোষিত শহিদ পরিবারগুলির প্রতি?
এমনিতেই এই ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা থানার পলাশচাবাড়ি গ্রামের এক শহিদ পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, দলের নেতারা আর তাঁদের দিকে ফিরেও তাকায় না। তাঁরা এও বলেছেন, ডাক পেলেও আর ২১শে জুলাইয়ের সভায় যান না তাঁরা। আজকের ঘটনা শহিদ পরিবারের সেই দাবীকেই সত্য বলে প্রমাণিত করল যেন।