নিজস্ব সংবাদদাতা: ট্রেনের মধ্যে যেন বোমা রাখা আছে আর তা এখুনি ফাটতে চলেছে এমনই আতঙ্কে খড়গপুর স্টেশনে ব্যাঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল যাত্রীদের একাংশ, আন্য অংশ উদভ্রান্তের মত দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। শুক্রবার দুপুরে আতঙ্কের এমনই ছবি দেখা গেল খড়গপুর রেল জংশনের ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। পরে জানা গেল করোনা আক্রান্ত এক যুবক এই ট্রেনে করেই অসম পালিয়ে যাচ্ছে, চলছে তারই খোঁজে তল্লাশি। ৫টা জেনারেল ক্ম্পর্টমেন্ট আর একটি স্লিপার কোচে তল্লাশি চালিয়ে অবশ্য মেলেনি কিছুই।খড়গপুর রেল সুরক্ষাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে ১২৫০৯ নম্বর ওই ট্রেনে করোনা আক্রান্ত এক যুবক পালিয়ে যাচ্ছে অসম এমনই খবর এসেছিল। মিলেছিল সেই যুবকের একটি ছবিও। ব্যাঙ্গালুরু থেকেই খবর এবং ছবিটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন রেলস্টেশনে এবং রেল সুরক্ষা বাহিনীর কাছে। এরপরই তৎপর হয়ে ওঠেন আরপিএফ ও রেলের কর্তারা। প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু হয়ে যায় খড়গপুর রেল স্টেশনে। শ’খানেক আরপিএফ জওয়ান দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম।
হাতে ছবি নিয়েই কামরায় কামরায় তল্লাশি। অতি দ্রুত নেমে পড়তে বলা হয় যাত্রীদের। অনেকেই বিষয়টা বুঝতে পারেননি। কেউ ভেবেছেন বোমা ফাটল বলে তো কেউ ভেবেছেন আগুন লেগেছে ট্রেনে। ফলে একসঙ্গে অনেকে নামতে গিয়ে দরজা সংকীর্ণ ও বন্ধ হয়ে পড়ে আর তখনই কয়েকজন আপৎকালীন জানলা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন নিচে।জানা গেছে এর আগেও ওড়িশাতে ট্রেনটিকে থামিয়ে সন্দেহভাজন যুবককে খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু ওই স্টেশনে ট্রেনটি স্বল্প সময় দাঁড়ানোয় পুরো তল্লাশি চালানো সম্ভব হয়নি। এরপরই খবর পাঠানো হয় খড়গপুরে। তৎপরতা শুরু হয়ে যায় রেল আধিকারিকদের মধ্যে, খবর দেওয়া হয় রেলের স্বাস্থ্য অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ রেলপুলিশ ও রেল সুরক্ষা বাহিনীকে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ জনের একটি দল রেলের ডেপুটি সিকিউরিটি কমিশনারের নেতৃত্বে নাকাবন্দী করে ফেলে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। যাত্রীদের নামিয়ে কামরা ফাঁকা করে দেওয়া হয়। এক এক করে যাত্রীদের আইকার্ড বা পরিচিতি পত্র দেখা হয়। যদিও খোঁজ মেলেনি ওই যুবকের।
রেল সুত্রে জানা গেছে অসমের বাসিন্দা বছর মধ্যে কুড়ির ওই যুবকের নাম বুলেন কুজুর। ব্যাঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি ফার্মে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করে সে। কয়েকদিন আগেই তার সর্দি কাশি ও জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়ার পরই পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
পাঁচটি কামরা থেকে কয়েক’শ যাত্রীকে তার ছবি দেখানো হলেও যাত্রীরা অবশ্য তার সুলুক সন্ধান দিতে পারেনি। এরপরই স্যানিটাইজার দিয়ে কামরাগুলি ভাল ভাবে জীবানুমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলে। ট্রেনের চেয়ার, দরজার হাতল, বাঙ্ক ঘষে ঘষে পরিষ্কার করা হয় এবং তারপর ফের যাত্রীদের চড়িয়ে প্রায় আধঘন্টা পর গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ট্রেন। তবে যে পদ্ধতিতে শুক্রবার তল্লাশি চালানো হয়েছে তা ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটাতেও পারত বলে যাত্রীদের আভিযোগ। সেই মুহূর্তে খড়গপুর জংশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার দুর্গেশ কুমার পাণ্ডা জানিয়েছেন, ‘খবর পাক্কা ছিল, সম্ভবত মাঝে কোথাও নেমে পড়েছে ওই যুবক।” যদি তাই হয় তবে সহযাত্রীদের একজনও চিনতে পারলনা যুবককে ? নাকি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের পর একটা মক টেস্ট দিয়ে ফেলল উদীপ্ত খড়গপুর ডিভিশনের কর্তারা।