নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা মোকাবিলায় কয়েক দফার লকডাউনের শেষে অবশেষে কিছুটা শিথিলতা এনে বাস যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন রাজ্য সরকার। যদিও সরকারের ঘোষণা সংক্রমন এড়াতে মোট ক্ষমতার পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে পারবেন বাস মালিকরা। এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছিলেন মানুষ বিশেষ করে যাঁদের পেশার তাগিদে কাজের জায়গায় যাতায়াত করতেই হয়। কিন্তু মানুষের সেই স্বস্তি কেটে যেতে সময় লাগেনি। এখনও অবধি রাস্তায় তো নামেইনি বাস উল্টে বাস মালিকদের সংগঠন জানিয়ে দিল যে আপাতত বাস চলছেই না জেলায়।
নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরও কেন বাস চলছেনা এই প্রশ্ন নিয়ে বেশকিছু মেল এসেছিল দ্য খড়গপুর পোষ্ট দপ্তরে। সেই প্রশ্ন নিয়েই যোগাযোগ করা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর বাস ওনার্স আ্যসোশিয়েশনের সম্পদক মৃগাঙ্ক মাইতির সঙ্গে। শ্রী মাইতি জানালেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাস চালাতে গেলে বাস মালিকদের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এমনিতেই গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই ক্ষতির বোঝা বইতে হচ্ছে আমাদের। এরপর আর নতুন করে ক্ষতির ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শ্রী মাইতি আরও জানিয়েছেন, গত বছর দেশব্যাপী লকডাউনের সময় মাসের পর মাস বাসগুলি পড়ে থাকায় নতুন করে সেই বাসগুলিকে চলাচলের উপযোগী করতে প্রচুর খরচ হয়েছে। সেই ধকল কাটিয়ে মাস কয়েক বাস চলাচলের পর ফের লকডাউন। এরপর যদিও বা নিষেধাজ্ঞা উঠল তাও বলা হচ্ছে পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হবে। এই পদ্ধতিতে বাস চালালে প্রচুর ক্ষতি হবে বাস মালিকদের তাই মালিকরা বাস চালাতে নারাজ। একই কথা জানিয়েছেন বেলদা বাস মালিক সংগঠনের নেতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ পাত্রও। বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নিয়ম মেনে বাস চালানো সম্ভব নয়। আমরাও বাস চালাতে চাই। বাস চালানোই আমাদের উপার্জনের একমাত্র উপায়। কিন্তু লোকসান করে বাস চালাবো কী করে? ’’
অন্যদিকে ঘাটাল মহকুমার বাস মালিকরা বৃহস্পতিবার থেকে হাওড়া, কলকাতা-সহ দূরপাল্লার বাস চালাতে শুরু করেছেন বটে কিন্তু স্থানীয় রুটে বা লোকাল বাস সেভাবে চলছেনা। ঘাটাল মহকুমা বাস মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক বাসের রাস্তায় নামার মতো পরিস্থিতি নেই। ডিজেলের দামও বেড়েছে। তাই সব বাস একসঙ্গে নামবে না। মহকুমা বাস মালিক সংগঠনের তরফে প্রভাত পান বলেন, “দুরপাল্লার বাস চালু হয়েছে তবে লোকাল বাসগুলি সুবিধা অনুযায়ী চলতে শুরু করবে।”
একই অবস্থা পাশের জেলা ঝাড়গ্রামেও। জঙ্গলমহলের বাস মালিকদের সংগঠনেরও বক্তব্য, ৫০ শতাংশ তো দূরের কথা, যে হারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে ১০০ শতাংশ যাত্রী নিয়েও বাস চালানো মুশকিল। ঝাড়গ্রাম জেলা বাস ওনার্স ওয়েললফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ তিওয়ারি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয়। তাই কেউ বাস চালাতে চাইছে না।’’
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি? এক বাস মালিক জানিয়েছেন, ‘‘বাস চালাতে গেলে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা করে বাস মালিকের ক্ষতি হবে। কর, টায়ার খরচ, ডিজেল, কর্মীদের বেতন-সহ আরও কিছু খরচ রয়েছে। সরকার যদি এই সব বিচার করে বাস মালিকদের ভর্তুকি দেন তাহলে বাস মালিকরা হয়ত বাস চালানোর ঝুঁকি নিতে পারেন।” পশ্চিম মেদিনীপুর বাস মালিক সংগঠনের নেতা মৃগাঙ্ক মাইতি বলেছেন ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। তিনি নিশ্চই বাস মালিকদের অসুবিধার কথা ভাবছেন। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন সেদিকে নজর রাখছি আমরা। তারপরই নিজেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বাস চালানোর বিষয়ে।” সব মিলিয়ে আগামী ৭ই জুলাই অবধি যে বাস চলছেনা তা প্রায় নিশ্চিত।